Skip to Content

মিথ্যা প্রচারণা এবং গুজব মোকাবিলায় কোরআনের নির্দেশনা

৪:৮৩ :: যখন তাদের নিকট নিরাপত্তার অথবা ভয়ের কোনো বিষয় আসে তখন তারা তার প্রচারণা চালায়। অথচ যদি তারা তা রসূলের এবং তাদের মধ্য থেকে 'উলিল আমরের' (কার্যনির্বাহী কর্তৃপক্ষের) কাছে পৌঁছে দিতো, তাহলে অবশ্যই তারা জানতে পারতো, তাদের মধ্য থেকে যারা ইস্তিম্বাত (বস্তুনিষ্ঠ বিশ্লেষণপূর্বক তথ্য উন্মোচন) করে। যদি তোমাদের প্রতি আল্লাহর অনুগ্রহ ও দয়া না থাকতো, তবে তোমাদের অল্প সংখ্যক ছাড়া সকলেই শয়তানের অনুসরণ করতো।


আলোচনা : সূরা নিসার ৮৩ নং আয়াতে মু'মিনদেরকে নিরাপত্তা বা ভয়ের কোনো বিষয় সামনে আসলেই বিচার-বিবেচনা ছাড়া তাৎক্ষণিকভাবে তার প্রচারণা চালানোর পরিবর্তে তা রসূল ও উলিল আমরের তথা মু'মিনদের কার্যনির্বাহী কর্তৃপক্ষের কাছে পৌঁছে দেয়ার নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। অন্যথায় সমাজে বিশৃঙ্খলা দেখা দিতে পারে এবং ভুল পদক্ষেপ গ্রহণ করা হতে পারে, এমনকি শয়তানের অনুসরণ তথা ইচ্ছায় বা অনিচ্ছায় শয়তানের এজেন্ডা বাস্তবায়ন হতে পারে।

রসূল ও উলিল আমরের কাছে পৌঁছে দেয়ার পর তা এমন একটি পরিষদের কাছে দেয়া হবে, যারা ইস্তিম্বাত করে অর্থাৎ বস্তুনিষ্ঠ বিশ্লষণপূর্বক তথ্য উন্মোচন করে। তাদের ইস্তিম্বাত অনুসারে রসূল ও উলিল আমরের পক্ষ থেকে প্রচারের অনুমতি পাওয়ার পর সংশ্লিষ্ট বিষয়ে প্রচার-প্রচারণা করা যাবে।

প্রচারণা হলো নির্দিষ্ট তথ্য ছড়িয়ে দেয়া, যাতে জনমত গঠন বা প্রভাবিত হয়, তা কোনো ইতিবাচক উদ্দেশ্যে পরিচালিত হতে পারে আবার কখনো তা নেতিবাচক উদ্দেশ্য প্রণোদিত বা পক্ষপাতমূলকও হতে পারে। সুতরাং প্রচারণা মাত্রেই নেতিবাচক বিষয় নয়, তবে ইতিবাচক প্রচারণার জন্য কুরআন নির্দেশিত পূর্বশর্ত পূরণ করা প্রয়োজন।

বর্তমানে উন্মুক্ত গণমাধ্যমের যুগে অবাধ প্রচারণার সুযোগে সহজে ‘গুজব’ ছড়িয়ে পড়ে। গুজব হলো ভিত্তিহীন ও অবিশ্বস্ত তথ্য বা গল্প, যা লোকমুখে (বা শেয়ার করার মাধ্যমে) দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে; গুজব তথ্যনির্ভর হয় না, বরং জনশ্রুতি (বা কোনো বিভ্রান্তিকর রচনা) থেকে গুজবের সূচনা হয়। অনেক সময় মূল বক্তা (বা লেখক) বলে দেয় যে, তার কাছে নিশ্চিত তথ্য নেই বরং অনুমান দাঁড় করিয়েছে; কিন্তু তা সত্ত্বেও পরে অন্যরা সেটাকে গুজবে রূপান্তরিত করে।

মিডিয়ায় ছড়িয়ে পড়া প্রচারণার ক্ষেত্রে মু’মিনদের দৃষ্টিভঙ্গি ও ভূমিকা এরূপ হতে পারে যে, যারা তথ্য ও অনুমানের সংমিশ্রণে একপাক্ষিক অবস্থান নিয়ে প্রচারণা তৈরি করে তাদের প্রচারণায় শামিল না হয়ে যারা বস্তুনিষ্ঠভাবে তথ্য বিশ্লেষণ করে সঙ্গত মনোভাব ও অনুসিদ্ধান্ত পরিগঠনে অবদান রাখে, তাদের এই কাজকে ‘ইস্তিম্বাত’ এর একটি ধরন হিসেবে গ্রহণ করা এবং কোনো বক্তব্য বা লেখনি শেয়ার করার ক্ষেত্রেও ‘ইস্তিম্বাত’ এর শর্ত পরিপূরণের দিকে লক্ষ্য রাখা।

 লেখক:  শওকত জাওহার

প্রশ্ন উত্তরের মাধ্যমে মোল্লাতন্ত্রেতর স্বরূপ উন্মোচন (পর্ব-১)