জাতিসংঘের প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের অধিকার সম্পর্কিত কনভেনশন (CRPD - Convention on the Rights of Persons with Disabilities) প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের মানবাধিকার সুরক্ষা এবং পূর্ণ অন্তর্ভুক্তি নিশ্চিত করার জন্য গৃহীত একটি আন্তর্জাতিক চুক্তি। এর অধীনে বিভিন্ন আর্টিকেলে প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের অধিকার এবং রাষ্ট্রগুলোর দায়িত্ব তুলে ধরা হয়েছে।
নিম্নে CRPD-এর প্রধান আর্টিকেলগুলো উল্লেখ করা হলো:
প্রাথমিক অনুচ্ছেদসমূহ
- আর্টিকেল 1: উদ্দেশ্য
- প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের পূর্ণ অধিকার এবং স্বাধীনতার সুরক্ষা।
- আর্টিকেল 2: সংজ্ঞা
- প্রতিবন্ধী, বৈষম্য, যৌক্তিক সুবিধা, সার্বজনীন নকশা ইত্যাদি সংজ্ঞায়িত করা।
- আর্টিকেল 3: সাধারণ নীতিমালা
- মর্যাদা, স্বাধীনতা, সমতা, এবং অন্তর্ভুক্তি নিশ্চিত করা।
অধিকার এবং দায়িত্বসমূহ
- আর্টিকেল 4: সাধারণ বাধ্যবাধকতা
- কনভেনশনের বিধান বাস্তবায়নে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া।
- আর্টিকেল 5: সমতা এবং বৈষম্যের বিরুদ্ধে সুরক্ষা
- সকলের জন্য আইনগত সমতা এবং বৈষম্যের অবসান।
- আর্টিকেল 6: প্রতিবন্ধী নারীদের বিশেষ অধিকার
- প্রতিবন্ধী নারীদের ক্ষমতায়ন এবং বৈষম্যের অবসান।
- আর্টিকেল 7: প্রতিবন্ধী শিশুদের অধিকার
- শিশুদের অধিকার এবং মতামতের প্রতি শ্রদ্ধা।
- আর্টিকেল 8: সচেতনতা বৃদ্ধি
- প্রতিবন্ধিতা বিষয়ক সচেতনতা এবং সামাজিক দৃষ্টিভঙ্গির উন্নতি।
নির্দিষ্ট অধিকারসমূহ
- আর্টিকেল 9: প্রাপ্যতা নিশ্চিত করা
- পরিবেশ, পরিবহন, তথ্যপ্রযুক্তি, এবং পরিষেবায় প্রবেশাধিকার।
- আর্টিকেল 10: জীবনযাপনের অধিকার
- প্রতিটি ব্যক্তির জীবন রক্ষার অধিকার।
- আর্টিকেল 11: ঝুঁকি এবং মানবিক সংকট মোকাবিলা
- জরুরি পরিস্থিতিতে সুরক্ষা এবং সহায়তা।
- আর্টিকেল 12: আইনগত ক্ষমতায়ন
- আইনত সমান অধিকার এবং দায়-দায়িত্ব।
- আর্টিকেল 13: বিচারিক ব্যবস্থায় প্রবেশাধিকার
- সুবিচার পাওয়ার অধিকার।
- আর্টিকেল 14: ব্যক্তি স্বাধীনতা এবং নিরাপত্তা
- অবৈধভাবে আটক বা সীমাবদ্ধ না করার নিশ্চয়তা।
- আর্টিকেল 15: নির্যাতন এবং নিষ্ঠুর আচরণ থেকে সুরক্ষা
- নির্যাতন, অমানবিক আচরণ বা শাস্তির বিরুদ্ধে সুরক্ষা।
- আর্টিকেল 16: নির্যাতন, সহিংসতা এবং অপব্যবহার থেকে সুরক্ষা
- বিশেষ করে নারী এবং শিশুদের সুরক্ষা।
- আর্টিকেল 17: শারীরিক এবং মানসিক অখণ্ডতা
- প্রতিটি ব্যক্তির শারীরিক এবং মানসিক সুরক্ষা।
- আর্টিকেল 18: চলাচলের স্বাধীনতা এবং জাতীয়তা
- নিজ দেশে বা বিদেশে চলাচলের অধিকার।
- আর্টিকেল 19: স্বাধীন জীবনযাপন এবং সমাজে অন্তর্ভুক্তি
- সমাজে স্বাধীনভাবে বসবাসের অধিকার।
- আর্টিকেল 20: ব্যক্তিগত চলাচল
- সহজ চলাচলের ব্যবস্থা এবং সহায়তা।
- আর্টিকেল 21: মতপ্রকাশ এবং তথ্যের স্বাধীনতা
- তথ্যপ্রাপ্তি এবং যোগাযোগের অধিকার।
- আর্টিকেল 22: গোপনীয়তার অধিকার
- ব্যক্তিগত তথ্যের সুরক্ষা।
- আর্টিকেল 23: পরিবার এবং বিবাহের অধিকার
- পরিবার গঠন এবং বিবাহের অধিকার।
- আর্টিকেল 24: শিক্ষা
- অন্তর্ভুক্তিমূলক এবং মানসম্মত শিক্ষা।
- আর্টিকেল 25: স্বাস্থ্য
- সবার জন্য স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করা।
- আর্টিকেল 26: পুনর্বাসন
- শারীরিক, মানসিক, সামাজিক, এবং পেশাগত পুনর্বাসন।
- আর্টিকেল 27: কর্মসংস্থান
- প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের জন্য উপযুক্ত কাজের সুযোগ।
- আর্টিকেল 28: পর্যাপ্ত জীবনযাত্রার মান এবং সামাজিক সুরক্ষা
- সামাজিক সুরক্ষা এবং সেবা নিশ্চিত করা।
- আর্টিকেল 29: রাজনৈতিক এবং জনজীবনে অংশগ্রহণ
- ভোটাধিকার এবং সিদ্ধান্ত গ্রহণে অংশগ্রহণ।
- আর্টিকেল 30: সাংস্কৃতিক জীবন, বিনোদন, এবং খেলাধুলায় অংশগ্রহণ
- সাংস্কৃতিক কার্যক্রম এবং খেলাধুলার সুযোগ।
বাস্তবায়ন এবং মূল্যায়ন
- আর্টিকেল 31: পরিসংখ্যান এবং ডেটা সংগ্রহ
- প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের অবস্থা পর্যবেক্ষণে ডেটা সংগ্রহ।
- আর্টিকেল 32: আন্তর্জাতিক সহযোগিতা
- প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের অধিকার সুরক্ষায় বৈশ্বিক সহযোগিতা।
- আর্টিকেল 33: জাতীয় বাস্তবায়ন এবং পর্যবেক্ষণ
- কনভেনশনের বাস্তবায়ন নিশ্চিত করার জন্য ব্যবস্থা।
পর্যবেক্ষণ ও প্রতিবেদন
আর্টিকেল 34: প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের অধিকার সম্পর্কিত কমিটি
- একটি বিশেষ কমিটি গঠন, যা কনভেনশনের বাস্তবায়ন পর্যবেক্ষণ করবে এবং সদস্য রাষ্ট্রগুলোর প্রতিবেদন বিশ্লেষণ করবে।
আর্টিকেল 35: সদস্য রাষ্ট্রের প্রতিবেদন
- সদস্য রাষ্ট্রগুলোকে নির্দিষ্ট সময় অন্তর প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের অধিকার সুরক্ষায় গৃহীত পদক্ষেপ এবং উন্নয়ন সম্পর্কে প্রতিবেদন জমা দিতে হবে।
আর্টিকেল 36: প্রতিবেদন পর্যালোচনা
- প্রতিবেদনগুলো পর্যালোচনা করে জাতিসংঘের কমিটি সদস্য রাষ্ট্রগুলোকে প্রয়োজনীয় সুপারিশ প্রদান করবে।
আর্টিকেল 37: সদস্য রাষ্ট্রের সহযোগিতা
- সদস্য রাষ্ট্রগুলো কনভেনশনের বিধান বাস্তবায়নে জাতিসংঘের সঙ্গে সহযোগিতা করবে।
আর্টিকেল 38: অন্যান্য সংস্থার ভূমিকা
- আন্তর্জাতিক সংস্থা এবং সংস্থাগুলোও প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের অধিকার বাস্তবায়নে সহায়তা করবে।
কনভেনশনের সংশোধন এবং প্রক্রিয়া
আর্টিকেল 39: কনভেনশন সংশোধন
প্রয়োজনীয় ক্ষেত্রে কনভেনশনে সংশোধনী আনার পদ্ধতি উল্লেখ করা হয়েছে।
আর্টিকেল 40: সদস্য রাষ্ট্রের সভা
সদস্য রাষ্ট্রগুলো নিয়মিত সভার মাধ্যমে কনভেনশনের অগ্রগতি এবং চ্যালেঞ্জ নিয়ে আলোচনা করবে।
আর্টিকেল 41: জাতিসংঘের ভূমিকা
- জাতিসংঘের মহাসচিব এই প্রক্রিয়ায় কেন্দ্রীয় ভূমিকা পালন করবেন।
চূড়ান্ত ধারা
আর্টিকেল 42: স্বাক্ষর
কনভেনশন স্বাক্ষরের জন্য উন্মুক্ত থাকবে।
আর্টিকেল 43: অনুমোদন
- সদস্য রাষ্ট্রগুলো কনভেনশন অনুমোদনের মাধ্যমে এর প্রতি প্রতিশ্রুতি প্রকাশ করবে।
আর্টিকেল 44: আঞ্চলিক সংস্থার অংশগ্রহণ
- আঞ্চলিক একীকরণ সংস্থাগুলোও অংশগ্রহণ করতে পারবে।
আর্টিকেল 45: কার্যকর হওয়ার তারিখ
- কনভেনশন কত তারিখ থেকে কার্যকর হবে, তা নির্ধারণ।
আর্টিকেল 46: সংরক্ষণ
- কোনো আর্টিকেলের প্রতি আপত্তি উত্থাপনের সুযোগ।
আর্টিকেল 47: প্রত্যাহার
- সদস্য রাষ্ট্র তাদের অংশগ্রহণ প্রত্যাহারের প্রক্রিয়া।
আর্টিকেল 48: কনভেনশনের ভাণ্ডার
- কনভেনশনের নথি সংরক্ষণের দায়িত্ব।
আর্টিকেল 49: প্রাপ্যতার বিধান
- কনভেনশনকে সহজ এবং প্রাপ্য ভাষায় উপস্থাপন করার নির্দেশনা।
জাতিসংঘের প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের অধিকার সম্পর্কিত এই কনভেনশন বিশ্বব্যাপী প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের অধিকার সুরক্ষা এবং উন্নয়নের একটি গুরুত্বপূর্ণ দলিল। এটি কেবল একটি চুক্তি নয়, বরং একটি বৈশ্বিক দৃষ্টিভঙ্গি, যা সমতা, মর্যাদা, এবং অন্তর্ভুক্তি নিশ্চিত করার জন্য সদস্য রাষ্ট্রগুলোকে অনুপ্রাণিত করে।