পরিশিষ্ট ৩: সাজদাহ
আল কুরআনে সাজদাহ শব্দটি (মাসজিদ শব্দটি ছাড়া) যেসব শব্দরূপে ব্যবহৃত হয়েছে তা নিম্নরূপ:
সুজূদ (সাজদাহ শব্দের প্রতিশব্দ, ক্রিয়াবিশেষ্য ক্রিয়ারূপ ১) শব্দটি ব্যবহৃত হয়েছে ৪ স্থানে: ৪৮:২৯:২৪, ৫০:৪০:৫, ৬৮:৪২:৭, ৬৮:৪৩:৯।
সাজিদ (সাজদাহকারী, কর্তা, ক্রিয়ারূপ ১) ব্যবহৃত হয়েছে ১ স্থানে: ৩৯:৯:৬।
সাজিদূন (সাজিদ/সাজদাহকারী এর বহুবচন) শব্দটি ব্যবহৃত হয়েছে ১১ স্থানে: ৭:১১:১৬, ৭:১২০:৩, ৯:১১২:৬, ১২:৪:১৫, ১৫:২৯:৯, ১৫:৩১:৭, ১৫:৩২:৮, ১৫:৯৮:৬, ২৬:৪৬:৩, ২৬:২১৯:৩, ৩৮:৭২:৯।
সুজ্জাদ (সাজিদ/সাজদাহকারী এর বহুবচন) শব্দটি ব্যবহৃত হয়েছে ১১ স্থানে: ২:৫৮:১৩, ৪:১৫৪:৯, ৭:১৬১:১৫, ১২:১০০:৭, ১৬:৪৮:১৪, ১৭:১০৭:১৮, ১৯:৫৮:২৮, ২০:৭০:৩, ২৫:৬৪:৪, ৩২:১৫:৯, ৪৮:২৯:১৩।
সুজূদ (সাজিদ/সাজদাহকারী এর বহুবচন) শব্দটি ব্যবহৃত হয়েছে ২ স্থানে: ২:১২৫:২২, ২২:২৬:১৬।
সাজাদা (ক্রিয়া, ক্রিয়ারূপ ১) শব্দটি ব্যবহৃত হয়েছে ৩৫ স্থানে: ২:৩৪:৪, ২:৩৪:৬, ৩:৪৩:৪, ৩:১১৩:১৪, ৪:১০২:১৪, ৭:১১:৮, ৭:১১:১০, ৭:১২:৫, ৭:২০৬:১১, ১৩:১৫:২, ১৫:৩০:১, ১৫:৩৩:৪, ১৬:৪৯:২, ১৭:৬১:৪, ১৭:৬১:৬, ১৭:৬১:১০, ১৮:৫০:৪, ১৮:৫০:৬, ২০:১১৬:৪, ২০:১১৬:৬, ২২:১৮:৫, ২২:৭৭:৫, ২৫:৬০:৪, ২৫:৬০:৯, ২৭:২৪:৩, ২৭:২৫:২, ৩৮:৭৩:১, ৩৮:৭৫:৬, ৪১:৩৭:৮, ৪১:৩৭:১২, ৫৩:৬২:১, ৫৫:৬:৩, ৭৬:২৬:৩, ৮৪:২১:৬, ৯৬:১৯:৪।
সাজদাহ শব্দটি বিভিন্ন শব্দরূপসহ (মাসজিদ শব্দটি ছাড়া) যেসব আয়াতে আছে তার সমন্বিত তালিকা নিম্নরূপ:
০২:৩৪, ০২:৫৮: ০২:১২৫, ০৩:৪৩, ০৩:১১৩, ০৪:১০২, ০৪:১৫৪, ০৭:১১, ০৭:১২, ০৭:১২০, ০৭:১৬১, ০৭:২০৬, ০৯:১১২, ১২:০৪, ১২:১০০, ১৩:১৫, ১৫:২৯, ১৫:৩০, ১৫:৩১, ১৫:৩২, ১৫:৩৩, ১৫:৯৮, ১৬:৪৮, ১৬:৪৯, ১৭:৬১, ১৭:১০৭, ১৮:৫০, ১৯:৫৮, ২০:৭০, ২০:১১৬, ২২:১৮, ২২:২৬, ২২:৭৭, ২৫:৬০, ২৫:৬৪, ২৬:৪৬, ২৬:২১৯, ২৭:২৪, ২৭:২৫, ৩২:১৫, ৩৮:৭২, ৩৮:৭৩, ৩৮:৭৫, ৩৯:০৯, ৪১:৩৭, ৪৮:২৯, ৫০:৪০, ৫৩:৬২, ৫৫:০৬, ৬৮:৪২, ৬৮:৪৩, ৭৬:২৬, ৮৪:২১, ৯৬:১৯।
নিচে বিভিন্ন শব্দরূপে সাজদাহ শব্দ ধারণকারী আয়াতসমূহের অনুবাদ উপস্থাপন করা হলো:
২:৩৪ :: যখন আমি ফেরেশতাদেরকে বলেছিলাম, ‘আদমের জন্য সাজদাহ করো’, তখন তারা তার শ্রেষ্ঠত্বকে মেনে নিল বা সেজদাহ করলো। ইবলিস ছাড়া। সে অস্বীকার করলো ও অহংকার করলো।
২:৫৮ :: যখন আমি বলেছিলাম, ‘তোমরা এই জনপদে প্রবেশ করো। এবং তোমরা উহার যেখান থেকে ইচ্ছা করো স্বাচ্ছন্দ্যে খাও। এবং তোমরা সাজদাহরত বা বিনয়াবনত অবস্থায় ফটকদ্বার দিয়ে প্রবেশ করো। এবং তোমরা বলো, ক্ষমা চাই। তাহলে আমি তোমাদের গুনাহখাতা ক্ষমা করে দেবো। এবং সুন্দর আচরণকারীদেরকে অনুগ্রহ বাড়িয়ে দেবো।
৩:৪৩ :: হে মারইয়াম, তুমি বিনয় প্রকাশ করো তোমার প্রভুর উদ্দেশ্যে, এবং তুমি বিনয়াবনত হও বা সাজদাহ করো, এবং তুমি রুকূ' করো রুকূ'কারীগণের সাথে।
৩:১১৩ :: তারা সবাই এক রকম নয়। কিতাবীদের মধ্যে ক্বিয়ামকারী একটি উম্মাহ আছে। তারা রাতের বেলায় আল্লাহর আয়াতসমূহ তিলাওয়াত করে এবং তারা তা মেনে নেয় বা সাজদাহ করে।
৪:১৫৪ :: এবং আমি তাদের অঙ্গীকারের পরিপ্রেক্ষিতে তূরকে তাদের উপর সমুচ্চে তুলে ধরেছিলাম। এবং আমি তাদেরকে বলেছিলাম, “তোমরা সাজদাহরত অবস্থায় বা বিনয়ী ভাবে (উচ্ছৃংখলতা বা অহংকার না করে) ফটকদ্বার দিয়ে প্রবেশ করো”।
৭:১১ :: এবং নিশ্চয় আমি তোমাদেরকে সৃষ্টি করেছি। তারপর আমি তোমাদেরকে মানুষের আকৃতিদান করেছি। তারপর আমি ফেরেশতাদেরকে বলেছি, ‘আদমের শ্রেষ্ঠত্ব মেনে নাও বা সাজদাহ করো’। তখন তারা সাজদাহ করলো বা মেনে নিল। ইবলিস ছাড়া। সে সাজদাহকারী বা বিনয়ীদের অন্তর্ভুক্ত হয়নি।
৭:১২ :: আল্লাহ বললেন, ‘কিসে তোমাকে মানা করেছে যে, তুমি সাজদাহ বা মান্য করোনি, যখন আমিই তোমাকে আদেশ দিয়েছি?’ সে বললো, ‘আমি তার চেয়ে উত্তম। আপনি আমাকে সৃষ্টি করেছেন আগুন থেকে। এবং আপনি তাকে সৃষ্টি করেছেন মাটি থেকে’।
৭:১২০ :: এবং ঐ ঘটনা নত করে দিয়েছিলো যাদুকরদেরকে বশ্যতাস্বীকার কারী বা সাজদাহকারী হিসাবে।
৭:১৬১ :: তোমরা সাজদাহরত বা বিনীত অবস্থায় ফটকদ্বার দিয়ে প্রবেশ করো। তাহলে আমি তোমাদের গুনাহখাতা ক্ষমা করে দেবো।
১২:৪ :: যখন ইউসুফ তার পিতাকে বলেছিলো, ‘হে আমার আব্বা, নিশ্চয় আমি স্বপ্নে দেখেছি এগারোটি গ্রহ এবং সূর্য ও চন্দ্রকে। আমি ঐসবকে দেখেছি আমাকে মান্য করছে বা সাজদাহ করছে’।
১২:১০০ :: এবং সে তার পিতামাতাকে রাজকীয় আসনের উপরে উঠিয়ে নিলো। এবং ইউসুফের পিতা, মাতা ও ১১ ভাই ইউসুফের শ্রেষ্ঠত্ব মেনে নিল বা সাজদাহতে ঝুঁকে পড়লো। এবং সে বললো, ‘হে আমার আব্বা, ইহাই আমার স্বপ্নের ব্যাখ্যা, যা আমি আগে দেখেছিলাম। নিশ্চয় আমার প্রভু উহাকে সত্য ঘটনায় পরিণত করেছেন। এবং নিশ্চয় তিনি অনুগ্রহ করেছেন আমার প্রতি, যখন তিনি আমাকে বের করেছেন কারাগার থেকে এবং আপনাদেরকে এনেছেন মরুভূমি থেকে, উহার পরে যে, শয়তান বিরোধ লাগিয়েছিলো আমার ও আমার ভাইদের মধ্যে। নিশ্চয় আমার প্রভু যা ইচ্ছা করেন তা সম্পাদনের উপায় সম্পর্কে সূক্ষদর্শী। নিশ্চয় তিনি মহাজ্ঞানী ও মহাবিজ্ঞ’।
১৩:১৫ :: এবং আল্লাহর জন্য বিনীত অবস্থায় থাকে বা সাজদাহ করে যা কিছু আছে আকাশমন্ডলী ও পৃথিবীতে ইচ্ছায় হোক এবং অনিচ্ছায় হোক, এবং তাদের ছায়াগুলোও সকালে ও বিকালে।
১৫:৩৩ :: ইবলিস বললো, ‘আমি মানুষের শ্রেষ্ঠত্বকে মেনে নিতে বা সাজদাহ করতে সম্মত নই, যাকে আপনি সৃষ্টি করেছেন গন্ধযুক্ত কাদা থেকে তৈরি শুকনো ঠনঠনে মাটি থেকে’।
১৫:৯৮ :: তুমি তোমার প্রভুর প্রশংসাজ্ঞাপনসহ তাঁর পবিত্রতা বর্ণনা করো। এবং যারা বিনয়ী বা সাজদাহকারী তাদের অন্তর্ভুক্ত হও।
১৬:৪৮ :: তারা কি দেখেনি ঐসব কিছুর অবস্থা যা আল্লাহ সৃষ্টি করেছেন, বিভিন্ন বস্তুর মধ্য থেকে? ফিরে আসে উহার ছায়া ডানদিক থেকে ও বামদিক থেকে, আল্লাহর জন্য নত বা সাজদাহকারী অবস্থায়, এবং তারা বিনয়ী।
১৬:৪৯ :: এবং আল্লাহর বশ্যতা স্বীকার করে বা সাজদাহ করে যা কিছু আছে আকাশমন্ডলীতে এবং যা কিছু আছে পৃথিবীতে, জীবজন্তু এবং ফেরেশতাগণ এবং তারা অহংকার করে না।
১৭:১০৭ :: বলো, ‘তোমরা উহার প্রতি বিশ্বাস করো অথবা বিশ্বাস না করো, নিশ্চয় যাদেরকে আসমানী কিতাবের জ্ঞান দেয়া হয়েছে তোমাদের আগে; যখন উহা (আল কুরআন) তাদের কাছে পাঠ করা হয়, তখন তারা চিবুকসমূহের উপর সাজদাহয় ঝুঁকে পড়ে।
১৯:৫৮ :: যখন তিলাওয়াত করা হতো তাদের কাছে দয়াময়ের আয়াতসমূহ, তখন তারা বিনীত হত বা সাজদা করত এবং কান্নায় ঝুঁকে পড়তো।
২০:৭০ :: তারপর মূসার উপস্থাপনের পর যাদুকরগণ বশ্যতা স্বীকার করল (সাজদাহয নত হয়ে গেলো)। তারা বললো, ‘আমার বিশ্বাস করেছি হারূন ও মূসার প্রভুর প্রতি’।
২২:১৮ :: তুমি কি ভেবে দেখোনি যে, আল্লাহ এমন সত্তা, তাঁর জন্য অনুগত হয় বা সাজদাহ করে যারা আছে আকাশমন্ডলীতে এবং যারা আছে পৃথিবীতে এবং সূর্য, চন্দ্র, নক্ষত্রমন্ডলী, পাহাড়সমূহ, গাছ-গাছালি, প্রাণীসমূহ এবং মানুষের মধ্য থেকে অনেকে।
৩২:১৫ :: নিশ্চয় আমার আয়াতসমূহের প্রতি তারাই বিশ্বাস করে যারা এমন যে, যখন তাদেরকে উহা দ্বারা উপদেশ দেয়া হয় তখন সাজদায় ঝুঁকে পড়ে এবং তাদের প্রভুর প্রশংসাজ্ঞাপনসহ পবিত্রতা বর্ণনা করে এবং তারা অহংকার করে না।
৪৮:২৯ :: মুহাম্মাদুর রসূলুল্লাহ এবং যারা তার সাথে আছে তারা কাফেরদের প্রতি কঠোর এবং তাদের নিজেদের মধ্যে দয়ালু। তুমি তাদেরকে দেখবে ঝুঝে আছে সত্যের দিকে বা রুকূ'কারী ও আয়াত মান্যকারী বা সাজদাহকারী, আল্লাহর পক্ষ থেকে অনুগ্রহ হালাল জীবিকা ও তাঁর সন্তুষ্টি অন্বেষণকারী। তাদের লক্ষণ তাদের মুখমন্ডলে ফুটে থাকে বিনয় বা সাজদাহর চিহ্ন।
৫৩:৬২ :: তোমরা আল্লাহর জন্য অনুগত হও সাজদাহ করো এবং তাঁর ইবাদাত করো বা তাঁর বিধান মেনে চল।
৫৫:৬ :: নক্ষত্র ও গাছ উভয়ে তাঁর আদেশের অনুগত হয় বা সাজদাহ করে।
৮৪:২০-২১ :: তাদের কি হলো যে, তারা ঈমান (বিশ্বাস) করে না? এবং যখন তাদের কাছে আল কুরআন পাঠ করা হয় তখন তারা সাজদাহ করে না?
৯৬:১৯ :: কক্ষনো না। তুমি তাকে মান্য করো না এবং আল্লাহকে মান্য করা বা সাজদাহ করো এবং তাঁর নেকট্য অর্জন করো।
সাজদাহ সম্পর্কে মৌলিক আলোচ্য পয়েন্ট
১. সাজদাহ সালাতের মধ্যে সীমাবদ্ধ বিষয় নয়, এটি সালাতের সাথেও সম্পৃক্ত আবার বিযুক্ত অবস্থায়ও আছে। (২২:৭৭-৭৮, ৪:১০২)
২. সাজদাহ সম্পর্কিত আয়াতসমূহের সমন্বিত অধ্যয়ন অনুসারে, সাজদাহ বলতে বুঝায়: (১) কারো সম্মানার্থে মাথা ঝোঁকানো (যা চেয়ারে বসেও করা যায়), (২) পরম প্রণতি বা প্রণিপাত, (৩) কোনো কর্তৃত্বের প্রতি পূর্ণ সম্মান জ্ঞাপন বা কোনো তথ্য-নির্দেশকে সম্পূর্ণ ঐকান্তিকভাবে মেনে নেয়া, (৪) কারো কর্তৃত্বের প্রতি স্বীকৃতির সাথে সম্পর্কিত তাৎক্ষণিক ও ধারাবাহিক ভূমিকা পালনের অভিব্যক্তি, (৫) উপাসনামূলক সম্মান/ভক্তি প্রদর্শন।
৩. কেউ কেউ যত স্থানে সাজদাহ শব্দ ব্যবহৃত হয়েছে তার সর্বত্র এর অর্থ ‘মান্য করা’ অনুবাদ করার প্রয়াস পান। কিন্তু কুরআনে দাসত্বের জন্য ইবাদাত এবং আদেশ মান্য করার জন্য ইতায়াত শব্দ ব্যবহৃত হয়েছে। সাজদাহ এর অর্থের মধ্যে আদেশ শুনা ও মানার দিকটিও অন্তর্ভুক্ত, কিন্তু এটিই সাজদাহ শব্দের সরাসরি অর্থ নয়। সাজদাহর মাধ্যমে কোনো কর্তৃত্বকে মেনে নেয়া ও তার নির্দেশনার যথাযথ বাস্তবায়ানার্থে তা গ্রহণ করার অভিব্যক্তি প্রকাশ পায়। কিন্তু সাজদাহ শব্দটি দ্বারা এরুপ আনুষ্ঠানিক কর্মও বুঝায়, যা সাধারণভাবে আদেশ মান্য করা নয় এবং কখনো কখনো যার সাথে কোন আদেশের সম্পর্ক নেই বরং শুধু ভক্তি প্রকাশের উপায় হিসাবেও সাজদাহ করা হতে পারে (৪১:৩৭, ২৭:২৪, ৬৮:৪২-৪৩)। আবার ২৬:২১৮-২১৯, ২৫:৬৪ ও ৩৯:৯ অনুযায়ী, সাজদাহ ও ক্বিয়াম দুটি স্বতন্ত্র অবস্থা যার মধ্যে অবস্থান্তর প্রক্রিয়া কার্যকর রয়েছে তথা একটি অবস্থা থেকে অন্য অবস্থায় যেমন ক্বিয়াম থেকে সাজদাহয় এবং সাজদাহ থেকে ক্বিয়ামে যাওয়ার মাধ্যমে অবস্থার পরিবর্তন ঘটে।
৪. আনুষ্ঠানিক ক্বিয়াম / দাঁড়ানো এবং সাজদাহ / প্রণিপাত করার স্বাভাবিক পদ্ধতি একটি সুপরিজ্ঞাত বিষয়, এটিকে হুবহু সুনির্দিষ্ট করে কোনো জটিলতা আরোপ করা হয়নি। কুরআন মানুষের ব্যবহারিক ভাষায় নাযিল হয়েছে এবং এ কারণে মানুষের ব্যবহারিক ভাষা অনুযায়ী কুরআনের বক্তব্য অনুধাবন করতে হবে। অবশ্য কুরআনে শব্দসমূহকে উহার শব্দমূল ভিত্তিক মৌলিক সংগতিপূর্ণ অর্থে বা ভাবার্থে ব্যবহার করা হয়েছে যে কারণে উহা যিকির বা পুন:পুন স্মরণ ও উপদেশ গ্রহণের জন্য সহজ হয়েছে। সাজদাহর প্রচলিত প্রতিষ্ঠিত পদ্ধতি গ্রহণযোগ্য, যদিও উহাই একমাত্র পদ্ধতি হিসাবে কুরআনে সীমাবদ্ধ করা হয়নি, বরং এক্ষেত্রে নির্বাহী অবকাশ দেয়া হয়েছে। রুকূ'র ক্ষেত্রেও অনুরূপ কথা।
সাজদাহর পদ্ধতি যে মানুষের মনস্তত্ত্বে অন্তর্নিহিত করা আছে নবী মূসার সময়ে যাদুকরদের সাজদাহ থেকে তা স্পষ্ট। তাদেরকে কোনো হাদীসগ্রন্থের মাধ্যমে সাজদাহর পদ্ধতি শিখানো হয়নি এবং তারা যে পদ্ধতিতে সাজদাহ করেছে আল্লাহর নিকট সেটিই তাদের সাজদাহ হিসেবে গ্রহণযোগ্য হয়েছে। এক্ষেত্রে তাদের পা, কোমর, কপাল কিভাবে ছিলো না ছিলো এসব নিয়ে আপত্তি কিংবা চুলচেরা বিশ্লেষণ করা হয়নি। প্রাসঙ্গিক আয়াত: ৭:১২০, ২০:৭০, ২৬:৪৬।
সুতরাং আনুষ্ঠানিক সাজদাহর স্বরূপ কী হবে তা পরম্পরাগত অনুশীলন থেকে উপলব্ধি করা যেতে পারে, আল্লাহর প্রতি ভক্তি প্রকাশার্থে যে ধরনের শারীরিক ভাষা (Body Language) বা শারীরিক মুভমেন্ট করা যেতে পারে বলে মানুষের মনস্তত্ত্বে অন্তর্নিহিত রয়েছে সে অনুসারে সাজদাহ করা যেতে পারে। তবে কুরআনের বিভিন্ন আয়াতের মাধ্যমে যাচাই করে নিয়ে সেটির স্বরূপকে পরিশীলিত করে নিতে হবে। যেমন শুধুমাত্র দাঁড়ানো অবস্থায় মাথা নিচু রাখলে সেটিই সাজদাহ হিসেবে যথেষ্ট সাব্যস্ত হবে কিনা, বিষয়টি যাচাই সাপেক্ষ। এ বিষয়ে পরবর্তী একটি পয়েন্টে আলোচনা করা হবে।
৫. যখন সালাত ও যাকাতের সাথে রুকূ'র কথা বলা হয়, তখন তা সালাতের অন্তর্ভুক্ত রুকূ' নয়, স্বতন্ত্র রুকূ'। যখন সালাত ও যাকাতের পাশাপাশি সাজদাহর কথা বলা হয়, সেক্ষেত্রেও অনুরূপ কথা প্রযোজ্য। অর্থাৎ এসব ক্ষেত্রে তা সালাত ও যাকাতের মতই একটি স্বতন্ত্র কাজ।
৬. মানসিক সংযোগ বিহীন রুকূ' ও সাজদাহ প্রকৃত রুকূ' ও সাজদাহ নয়। রুকূ'-সাজদাহ এর অনানুষ্ঠানিক বা ব্যাপকভত্তিক অর্থের ক্ষেত্রে এর আধ্যাত্মিক দিকটিকেই সরাসরি হাইলাইট করা হয়। অন্যদিকে আনুষ্ঠানিক রুকূ'-সাজদাহর ক্ষেত্রে এর আধ্যাত্মিক দিকটির সাথে সমন্বয় না থাকলে তা নিছক আনুষ্ঠানিকতায় পরিণত হয়ে প্রকৃত রুকূ'-সাজদাহ হিসেবে গ্রহণযোগ্যতা হারায় বা মূল্যহীন হয়ে যায়। আলোচনার প্রসঙ্গ (Context) অনুসারে কোথায় রুকূ'-সাজদাহর আনুষ্ঠানিক দিকটিও অন্তর্ভুক্ত হবে তা চিহ্নিত করা সম্ভব।
৭. নক্ষত্র ও উদ্ভিদ সাজদাহ করে, বস্তুসমূহের ছায়া ডানে বামে সরে গিয়ে সাজদাহ করে। এক্ষেত্রে সূর্য হলো ছায়ার দলীল যে, কোনদিকে ছায়া পড়বে তা নির্ধারিত হবে সূর্য কোনদিক থেকে আলো দিচ্ছে তার উপর। অন্য কথায়, আল্লাহর দেয়া ফর্মুলা অনুসারে যখন মুভমেন্ট হয় সেটাই সাজদাহ।
আবার এর মানে এটাও নয় যে, মানুষের ক্ষেত্রে আনুষ্ঠানিক সাজদাহর কোনো অবকাশ নেই। কারণ অন্যান্য সৃষ্টির সৃষ্টি-প্রকৃতির সাথে মানুষের সৃষ্টি-প্রকৃতির অনেক মিল থাকার পাশাপাশি অমিলও রয়েছে। মানুষকে যে ধরনের মনোদৈহিক গঠন-প্রকৃতি দেয়া হয়েছে সেই সাপেক্ষে মানুষের সাজদাহর ক্ষেত্রে একটি আনুষ্ঠানিক রূপ থাকলে অন্য সৃষ্টির ক্ষেত্রে প্রযোজ্য সাজদাহর সাথে তার আক্ষরিক মিল অনুসন্ধান করতে হবে এমনটি অপরিহার্য নয়।
৮. কুরআন ক্বিরায়াত শুনে সাজদাহ করতে হয়। এর মানে হলো মনোযোগ দিয়ে তা শুনতে হবে এবং তার নির্দেশনাগুলো মানতে হবে। অন্য কথায়, সাজদাহ হলো ‘শুনা ও মানা’ এর সমার্থক শব্দ। এছাড়াও কুরআন ক্বিরায়াত শেষে আনুষ্ঠানিক সাজদাহ করা যেতে পারে।
৯. সাজদাহরত অবস্থায় ফটকদ্বার দিয়ে প্রবেশ করার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। এর মানে হলো আল্লাহর প্রতি ভক্তিপ্রবণ থেকে ফটকদ্বার দিয়ে প্রবেশ করতে হবে।
১০. চন্দ্র ও সূর্যকে সাজদাহ নয়। অর্থাৎ চন্দ্র ও সূর্যকে কোনো ক্ষেত্রে স্বাধীন প্রভাব বিস্তারকারী মনে করে এর উপাসনা করা যাবে না, এর প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করা যাবে না।
১১. আদমকে এবং ইউসুফকে সাজদাহ করার মানে হলো আদম ও ইউসুফকে আল্লাহ যে কর্তৃত্ব দিয়েছেন উহার স্বীকৃতি প্রদান করে তাদের প্রতি সম্মান প্রদর্শন করা। এটা তাদের উপাসনামূলক সাজদাহ নয়, বরং এটা সাধারণ সম্মান প্রদর্শনমূলক অভিব্যক্তি। সুতরাং এক্ষেত্রে অঙ্গভঙ্গি তেমন হওয়ার কথা নয় যা আল্লাহর প্রতি উপাসনামূলক সাজদাহর ক্ষেত্রে হয়। এ বিষয়ে নমুনাস্বরূপ ইউসুফের প্রতি যে সাজদাহ সেক্ষেত্রে তাঁর পিতামাতা সিংহাসনে বসা অবস্থায় সাজদাহ করেছিলেন। সুতরাং এ সাজদাহ চেয়ারে বসে সামান্য মাথা ঝুঁকানোর মাধ্যমে সম্মান প্রদর্শনের মাধ্যমেই সম্পাদিত হয়ে যায়। এমনকি এ অর্থে ছাত্ররা যখন শিক্ষকের সম্মানার্থে দাঁড়ায় তাকেও সাজদাহ বলা যেতে পারে। তবে একটি বিশেষ লক্ষণীয় বিষয় হলো, আদমের প্রতি সাজদাহ আল্লাহর সরাসরি নির্দেশে সংঘটিত হয়েছে। এবং ইউসুফের প্রতি সাজদাহও আল্লাহর পক্ষ থেকে দেখানো একটি স্বপ্নের বাস্তবায়নগত রূপের উপলব্ধি (তাভীল) অনুসারে তাঁর পিতামাতা ও তাদের অনুকরণে তাঁর ১১ ভাইয়ের অংশগ্রহণের মাধ্যমে সম্পন্ন হয়েছে। কিন্তু এছাড়া কোনো মানুষকে অন্য মানুষরা সাজদাহ করার জন্য কুরআনে কোনো নির্দেশ দেয়া হয়নি। সুতরাং বর্তমানে আমরা কাউকে সাজদাহ করার জন্য নির্দেশপ্রাপ্ত নই। এমনকি কুরআনে রসূলের সমকালেও মু’মিনদেরকে নির্দেশ দেয়া হয়নি যে, তোমরা রাসূলকে সাজদাহ করো। তাই আদম ও ইউসুফের সাজদাহকে সামনে এনে মানুষ মানুষকে সাজদাহ দিতে হবে এরূপ কোনো নিয়ম প্রবর্তন করা যেতে পারে না। এছাড়া আদম ও ইউসুফের সাজদাহর একটি বিশেষ তাৎপর্য হলো, তাঁদেরকে আল্লাহ প্রদত্ত কর্তৃত্ব মেনে নিয়ে তাঁরা যেন নির্বিঘ্নে সেই কর্তৃত্ব চর্চার মাধ্যমে আল্লাহর অনুমোদিত সীমারেখায় কার্যক্রম সম্পাদন করতে পারেন সেজন্য সহযোগিতামূলক পরিবেশ বজায় রাখা এবং সেজন্য তাঁদেরকে তাওফীক্ব প্রদানের জন্য আল্লাহর কাছে আবেদন করার অভিব্যক্তি। অর্থাৎ এক্ষেত্রে ‘আদমের জন্য সাজদাহ’ মানে ‘আদমের কর্তৃত্বের প্রতি অনুকূল মনোবৃত্তির প্রকাশস্বরূপ আল্লাহকে সাজদাহ’ এর অর্থ প্রকাশ পায়। অর্থাৎ কোনোক্রমেই আদম ও ইউসুফকে সাজদাহর স্বরূপ আল্লাহর জন্য যে সাজদাহ সেটির অনুরূপ হতে পারে না। আল্লাহর জন্য সাজদাহ হলো উপাসনামূলক। অন্যদিকে আদমের জন্য ও ইউসুফের জন্য সাজদাহ কোনোক্রমেই তাঁদের প্রতি উপাসনামূলক হতে পারে না। কারণ উপাসনা পাওয়া একমাত্র আল্লাহর অধিকার। এবং তাই উপাসনামূলক সাজদাহ পাওয়াও একমাত্র আল্লাহর অধিকার। সুতরাং আগে ‘সাজদাহয়ে তাজিমি’ (সম্মানজনক সাজদাহ) হিসেবে মানুষকে সাজদাহ দেয়া বৈধ ছিলো, এখন নেই; এ কথা বলা গ্রহণযোগ্য নয়। কারণ কুরআন এ ধরনের তথ্য দেয়নি। যদি সাজদাহ বলতে সাধারণ সম্মান প্রদর্শন যেমন কাউকে স্যালুট করা বুঝানো হয়, তা পূর্বে ও পরে সবসময় বৈধ, কারণ এটিকে নিষিদ্ধ করা হয়নি। কিন্তু যদি সাজদাহ বলতে যেভাবে ষষ্ঠাংগ প্রণিপাত করে আল্লাহর উপাসনা করা হয় তা বুঝায় তবে হুবহু একই বাহ্যিক কাঠামোর সাজদাহ মানুষের জন্য তা’জিমি অর্থে বৈধ বলার অবকাশ নেই। বিশেষ করে কুরআনে কোথাও ‘তোমরা নবী-রসূলকে বা অমুক ধরনের কোনো মানুষকে সাজদাহ করো’ এরূপ কোনো নির্দেশ নেই।
১২. বিভিন্ন সৃষ্টিকে সাজদাহ করতে দেখার তাৎপর্য হলো বিভিন্ন সৃষ্টি আল্লাহর তৈরি ফর্মুলা অনুসারে যথাযথ মুভমেন্ট অব্যাহত রাখে বিষয়টি পর্যবেক্ষণ করা।
১৩. চিবুকের উপর সাজদাহ করা ও কান্না করার তাৎপর্য হলো: চিবুককে অবনমিত করে সাজদাহ করা ও কান্না করা। দাঁড়িয়ে, বসে এবং উপাসনামূলক সাজদাহর সময় সর্বাবস্থায় চিবুককে অবনত করে কান্না করা যেতে পারে। তবে শুধুমাত্র চিবুক অবনত করাকেই সাজদাহ বলা হয় না। চিবুক উপরের দিকে উঠালে উন্নত শির হয় এবং চিবুককে অবনমিত করলে নতশির হয়। ষষ্ঠাংগ প্রণিপাতের সময়ও চিবুক অবনমিত করা হয় এবং সেক্ষেত্রে একটি স্বাভাবিক প্রক্রিয়া হিসেবে মাটিতে কপাল ঠেকে যায়। লক্ষ্য করলে বুঝা যায় যে, কপালের গঠন মাটিতে ঠেকিয়ে সাজদাহ করার সাথে সামঞ্জস্যশীল। তাই পরম সত্তার প্রতি আনুষ্ঠানিক সাজদাহর স্বরূপ হিসেবে পরম্পরাগত অনুশীলন ষষ্ঠাংগ প্রণিপাত সাজদাহর আনুষ্ঠানিক রূপ হিসেবে স্বাভাবিকভাবে গ্রহণযোগ্য।
১৪. রুকূ'রত ও সাজদাহরত দেখার তাৎপর্য হলো: নিরহংকার ও আল্লাহর প্রতি ভক্তিপ্রবণ হিসেবে দেখা, বিনীতভাবে আল্লাহর বিধানের অনুবর্তী হিসেবে দেখা। এবং চেহারায় সাজদাহর চিহ্ন থাকার তাৎপর্য হলো: সাজদাহ তথা আল্লাহর প্রতি ভক্তিপ্রবণ থাকার প্রভাবে চেহারায় নম্রতা-ভদ্রতার ছাপ থাকা। সাজদাহর প্রভাবে চেহারার মধ্যে চিহ্ন থাকা বলতে কোনো স্থুল চিহ্নকে বুঝায় না। যেমন- কোনো মুনাফিক্বও বাহ্যিক সাজদাহর মাধ্যমে কপালে দাগ লাগাতে পারে। এখানে আন্তরিক সাজদাহর প্রভাবে চেহারায় যে (জীবনপদ্ধতির) পবিত্রতার আভা / দীপ্তি / ছাপ থাকে, যা দার্শনিক দৃষ্টিতে ধরা পড়ে, তার কথাই বুঝানো হয়েছে।
১৫. ক্বিয়ামাত দিবসে সাজদাহ করার নির্দেশ অথচ তা না পারার তাৎপর্য হলো যারা পৃথবীতে শারীরিকভাবে বাহ্যিক সাজদাহ করলেও প্রকৃতপক্ষে আধ্যাত্মিকভাবে সাজদাহ করেনি তাদের এরূপ অবস্থার প্রমাণ উপস্থাপনস্বরূপ সেদিন শারীরিকভাবে সাজদাহ করতে আদেশ দেয়া হবে অথচ তারা তা পারবে না। এর মাধ্যমে তাদের পার্থিব কর্মকাণ্ডে তারা কিরূপ ছিলো তার প্রমাণ পাওয়া যাবে। নিম্নে বিষয়টি ভালোভাবে অনুধাবনের সুবিধার্থে প্রাসঙ্গিক আয়াতসমূহ উল্লেখ করা হলো:
সূরা কলম ৬৮: ৪২-৪৩ :: যেদিন পায়ের গোছা অনাবৃত করা হবে / তারা কঠিন বাস্তবতার সম্মুখীন হবে এবং সাজদাহ করার জন্য ডাকা হবে, সেদিন এসব লোক সাজদাহ করতে পারবে না। তাদের দৃষ্টি নত থাকবে, অপমান তাদের উপর ছেয়ে থাকবে। এবং নিশ্চয় (পৃথিবীতে) সুস্থ থাকা অবস্থায় তাদেরকে সাজদাহ করার জন্য আহবান করা হয়েছিল (এবং তারা তা করেনি)।
সূরা সাজদাহ ৩২:১২ :: তুমি যদি ঐ সময় দেখ যখন অপরাধীরা মাথা ঝুঁকিয়ে তাদের রবের সামনে দাঁড়িয়ে থাকবে। (তখন তারা বলতে থাকবে) হে আমাদের রব, আমরা খুব দেখলাম ও শুনলাম। এখন আমাদেরকে ফেরত পাঠিয়ে দাও, আমরা নেক আমল করবো। এখন আমাদের ইয়াক্বীন এসে গেছে।
আয়াতদুটি থেকে এ কথা স্পষ্ট যে, সাজদাহর একটি আনুষ্ঠানিক রূপ আছে এবং তা অবশ্যই শুধু দৃষ্টি নিচু করা বা মাথা ঝুঁকিয়ে দাঁড়িয়ে থাকা নয়। কেননা যদি তা হতো তবে তা করা সত্ত্বেও অপরাধীরা সাজদাহ করতে পারবে না কথাটি অর্থবহ হতো না। আল্লাহ যেহেতু পরম সত্তা সেহেতু তাঁর উদ্দেশ্যে সাজদাহ হবে পরমভাবে প্রণত হওয়া। তাই সামান্য মাথা ঝুঁকানো তাঁর উদ্দেশ্যে সাজদাহ হিসাবে যথেষ্ট নয়।
পৃথিবীর আধ্যাত্মিক অবস্থা আখিরাতে বস্তুগত রূপ লাভ করবে। যেমন পৃথিবীতে যারা সত্যের ব্যাপারে অন্ধসদৃশ ছিলো তারা এর প্রতিক্রিয়াস্বরূপ ক্বিয়ামাত দিবসে অন্ধসদৃশ হয়ে দণ্ডায়মান হবে। এ দৃষ্টিকোণ থেকে এ সাজদাহর মাধ্যমে সাজদাহর আনুষ্ঠানিক দিকের ধারণা লাভ করা যায়। যারা সাজদাহ করে সঠিক মনোভাব ও শিক্ষাগ্রহণ ছাড়া তাদের সাজদাহ সাজদাহই নয়। তাই যারা পৃথিবীতে সাজদাহ করেনি বলতে যারা যথাযথ সাজদাহ করেনি তাদেরকেই বুঝায়। পৃথিবীতে সাজদাহ না করার প্রতিক্রিয়ায় ক্বিয়ামাত দিবসে শারীরিকভাবে সাজদাহ করার ক্ষেত্রে অক্ষম হওয়া অসম্ভব নয়।
১৬. সাজদাহর পর পিছনে সরে যাওয়ার প্রসঙ্গানুসারে সাজদাহর আনুষ্ঠানিক স্বরূপ সম্পর্কে ধারণা পাওয়া যায়। সাজদাহ যদি শারীরিক অঙ্গভঙ্গির সাথে সম্পর্কিত না হয় তবে কিভাবে বুঝা যাবে যে, তারা সাজদাহ করেছে এবং তারা পিছনে চলে যাবে ও অন্য দল আসবে? এ থেকে এটাও বুঝা যায় যে, সাজদাহ নিছক সার্বক্ষণিক বিষয় নয়। বরং প্রসঙ্গানুসারে এটি আনুষ্ঠানিক সাজদাহর অর্থেও প্রযোজ্য হয়।
১৭. তাওয়াফ, ক্বিয়াম, রুকূ', সাজদাহ, ই'তিকাফ: তাওয়াফ হলো: (১) আল্লাহর বিধান পরিপালনার্থে কোনো পয়েন্টে বারবার ঘুরাফিরা করা (২) কা’বাঘরের চতুর্দিকে আবর্তন করা। ক্বিয়াম হলো: (১) আল্লাহর বিধান অনুসারে কোনো কাজের জন্য উদ্যোগ নেয়া (২) সালাতের জন্য দাঁড়ানো। রুকূ' হলো: (১) নিরহংকারের সাথে বা বিনীতভাবে এবং স্বীয় চিন্তা ও কর্মের দুর্বলতার স্বীকৃতিস্বরূপ যেকোনো বিষয়ে আল্লাহর বিধানকে গ্রহণ করে নেয়া (২) দণ্ডায়মান অবস্থায় দুই জানুতে দুই হাত ঠেকিয়ে দেহের কোমর থেকে উপরের অংশ কোমর বরাবর সামনের দিকে ঝুঁকিয়ে কুর্নিশ করা। ই'তিকাফ হলো: (১) আল্লাহর বিধান পালনের জন্য আত্মনিয়োজিত ও ধ্যানমগ্ন হওয়া (২) কোনো সময়কাল নির্দিষ্ট করে নিয়ে সে দিনগুলোতে মাসজিদে ধ্যানমগ্ন থাকা এবং সাধারণ দিনগুলোর যে ধরনের ব্যস্ততা নিতান্তই প্রাকৃতিক নয়, বরং তা স্থগিত রাখা যেতে পারে, তা থেকে বিরত থাকা।
১৮. সাজদাহ প্রসঙ্গে দুটি বিশেষ নির্দেশনা হলো: (ক) তিলাওয়াত শুনে সাজদাহ করা (৮৪:২০-২১) এবং (খ) সাজদাহকারীদের অন্তর্ভুক্ত হওয়া (১৫:৯৮)।
পরিশিষ্ট ৪: মাসজিদ ও এর ভূমিকা
আল কুরআনে মাসজিদ বলতে কী বুঝানো হয়েছে বা এর তাৎপর্য ও ভূমিকা কী তা অনুধাবনের জন্য প্রথমত আল কুরআনে ‘মাসজিদ’ শব্দ ধারণকারী আয়াতসমূহের সমন্বিত অধ্যয়ন করা প্রয়োজন।
মাসজিদ শব্দটি একবচনে ও বহুবচনে কুরআনে যেসব স্থানে ব্যবহৃত হয়েছে তা নিচে উল্লেখ করা হলো।
মাসজিদ (সাজদাহর প্রতিষ্ঠান) শব্দটি ২২ স্থানে ব্যবহৃত হয়েছে: ২:১৪৪:১৩, ২:১৪৯:৭, ২:১৫০:৭, ২:১৯১:১৫, ২:১৯৬:৬৫, ২:২১৭:১৭, ৫:২:৩৪, ৭:২৯:৯, ৭:৩১:৭, ৮:৩৪:৯, ৯:৭:১৩, ৯:১৯:৫, ৯:২৮:৯, ৯:১০৭:৩, ৯:১০৮:৫, ১৭:১:৭, ১৭:১:১০, ১৭:৭:১৫, ১৮:২১:৩২, ২২:২৫:৮, ৪৮:২৫:৬, ৪৮:২৭:৮।
মাসাজিদ (মাসজিদ এর বহুবচন) শব্দটি ৬ স্থানে ব্যবহৃত হয়েছে: ২:১১৪:৫, ২:১৮৭:৫৩, ৯:১৭:৬, ৯:১৮:৩, ২২:৪০:২২, ৭২:১৮:২।
মাসজিদ শব্দটি একবচনে ও বহুবচনে যেসব আয়াতে ব্যবহৃত হয়েছে তার সমন্বিত তালিকা নিম্নরূপ:
০২:১১৪, ০২:১৪৪, ০২:১৪৯, ০২:১৫০, ০২:১৮৭, ০২:১৯১, ০২:১৯৬, ০২:২১৭, ০৫:০২, ০৭:২৯, ০৭:৩১, ০৮:৩৪, ০৯:০৭, ০৯:১৭, ০৯:১৮, ০৯:১৯, ০৯:২৮, ০৯:১০৭, ০৯:১০৮, ১৭:০১, ১৭:০৭, ১৮:২১, ২২:২৫, ২২:৪০, ৪৮:২৫, ৪৮:২৬, ৭২:১৮।
মাসজিদ শব্দ ধারণকারী আয়াতসমূহের অনুবাদ নিম্নে উল্লেখ করা হলো:
২:১১৪ :: এবং তার চেয়ে বড় যালিম কে হতে পারে যে আল্লাহর মাসজিদসমূহে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে উহাতে তাঁর নামের স্মরণ / আলোচনা করতে এবং উহাকে খারাব / বিনষ্ট করার প্রচেষ্টা করে। তারাই ঐসব লোক যাদের কোন অধিকারই নেই যে, উহাতে প্রবেশ করবে ভীত সন্ত্রস্ত অবস্থায় ছাড়া। তাদের জন্য আছে দুনিয়াতে লাঞ্চনা এবং তাদের জন্য আছে আখিরাতে মহাশাস্তি।
২:১৪৪ :: নিশ্চয় আমি দেখেছি তোমার চেহারাকে আকাশের দিকে বারবার ফিরাতে। সুতরাং আমি তোমাকে ফিরিয়ে দেবো তোমার পছন্দের ক্বিবলাতে। সুতরাং তুমি ‘আল মাসজিদুল হারামের’ দিকে তোমার মুখ ফিরাও। এবং যেখানেই তোমরা থাকো উহার দিকে মুখ ফিরাও। এবং নিশ্চয় যাদেরকে কিতাব দেয়া হয়েছে তারা জানেই যে, উহাই (অর্থাৎ ‘আল মসজিদুল হারাম’কে ক্বিবলা নির্ধারণ) তাদের প্রভুর পক্ষ থেকে সঠিক। এবং তাদের আমলের বিষয়ে আল্লাহ উদাসীন নন।
২:১৪৯ :: এবং যেখান থেকেই তুমি বের হও ‘আল মাসজিদুল হারামের’ দিকে তোমার মুখ ফিরাও। এবং নিশ্চয় উহাই (‘আল মাসজিদুল হারাম’ ক্বিবলা হওয়ার বিষয়টি) তোমার প্রভুর পক্ষ থেকে সঠিক। এবং আল্লাহ তোমাদের আমলের বিষয়ে উদাসীন নন।
২:১৫০ :: এবং যেখান থেকেই তুমি (রসূল) বের হও (তোমার বর্তমান কার্যনির্বাহ যেখান থেকেই করো না কেন), ‘আল মাসজিদুল হারামের’ দিকে তোমার মুখ ফিরাও। এবং যেখানেই তোমরা থাকো উহার দিকে মুখ ফিরাও। যেন না থাকে মানুষের নিকট তোমাদের বিরুদ্ধে কোন বিতর্কের অবকাশ। কিন্তু তাদের মধ্যকার যারা যুলুম করেছে (তারা বিতর্ক করবেই)। সুতরাং তোমরা তাদেরকে ভয় করো না, আমাকেই ভয় করো। যেন আমি সম্পূর্ণ করি আমার নিয়ামাত তোমাদের উপর। এবং যেন তোমরা হিদায়াত পাও।
২:১৮৭ :: তোমাদের জন্য সিয়ামের রাতে তোমাদের স্ত্রীদের প্রতি দাম্পত্য-আবেগ উদ্দীপক ঘনিষ্ঠতা বৈধ করা হয়েছে। তারা তোমাদের পোশাক এবং তোমরা তাদের পোশাক। আল্লাহ জানেন যে, তোমরা তোমাদের নিজেদের প্রতি খিয়ানত করছো। তারপর তিনি তোমাদের তাওবাহ কবুল করেছেন এবং তোমাদেরকে ক্ষমা করে দিয়েছেন। সুতরাং এ পর্যায়ে তোমরা তাদের সাথে সহবাস করো এবং আল্লাহ তোমাদের জন্য যা বিধিবদ্ধ করে দিয়েছেন তা অন্বেষণ করো। এবং তোমরা খাও ও পান করো যতক্ষণ না তোমাদের জন্য দিগন্তের কালো রেখা থেকে ফজরের সাদা রেখা স্পষ্ট হয়। তারপর তোমরা তোমরা রাত (রাতের সূচনা) পর্যন্ত সিয়াম পূর্ণ করো। এবং তোমরা যখন মাসজিদে আকিফূন (ই'তিকাফরত / আত্মনিয়োজিত, ধ্যান ও গভীর চিন্তামগ্ন এবং অবস্থানকারী) থাকো, তখন (ই'তিকাফের দিনগুলোতে দিনে-রাতে কখনো) তাদের সাথে সহবাস করো না। এগুলো আল্লাহর স্থিরিকৃত সীমাসমূহ। সুতরাং তোমরা তা লংঘনের কাছেও যেও না। এভাবে আল্লাহ তাঁর আয়াতসমূহ মানবজাতির জন্য সুষ্পষ্টভাবে বর্ণনা করেন যেন তারা স্রষ্টা-সচেতন হতে পারে।
২:১৯১ :: (যুদ্ধ পরিস্থিতিতে) তোমরা তাদেরকে হত্যা করো (যুদ্ধক্ষেত্রের) যেখানেই তোমরা তাদের নাগাল পাও। এবং তোমরা তাদেরকে বের করে দাও যেখান থেকে তারা তোমাদেরকে বের করে দিয়েছে। ফিতনা (ধর্মীয় স্বাধীনতা হরণ এবং ভিন্ন ধর্ম অবলম্বনের কারণে নির্যাতন) হত্যার চেয়ে গুরুতর। তোমরা ‘আল মাসজিদুল হারামের’ কাছে তাদের সাথে যুদ্ধ করো না যতক্ষণ না তারা তাতে তোমাদের সাথে যুদ্ধ করে। কিন্তু যদি তারা তোমাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে তাহলে তাদেরকে হত্যা করো। (অর্থাৎ তাদেরকে প্রতিরক্ষামূলক যুদ্ধের মাধ্যমে প্রতিহত করো এবং আন্তর্জাতিক আদালত প্রতিষ্ঠা করে বিচারিক প্রক্রিয়ায় মৃত্যুদণ্ডে দণ্ডিত করো)। এরূপই (যুদ্ধের নৈতিক বিধি প্রত্যাখ্যানকারী) কাফিরদের প্রতিফল।
২:১৯৬ :: এবং তোমরা আল্লাহর (সন্তুষ্টি অর্জনের) উদ্দেশ্যেই হজ্জ ও উমরা পূর্ণ করো। তবে যদি তোমরা বাধাপ্রাপ্ত হও, তাহলে (তোমাদের জন্য কা’বায় পৌঁছানোর) হাদিয়া (উপহার) হিসেবে যা সহজ হয় (তাই যথেষ্ট)। এবং তোমরা মাথামুণ্ডন করো না যতক্ষণ না হাদিয়া যথাস্থানে পৌঁছে। তোমাদের মধ্য থেকে যে অসুস্থ হয় বা তার মাথায় কষ্টদায়ক কিছু হয় তাহলে ফিদইয়া (মুক্তিপণ) হবে সিয়াম করা (অর্থাৎ রোজা রাখা) বা সদাক্বাহ দেয়া বা নুসুক করা (অর্থাৎ ধর্মীয় বা সামাজিক আচার-অনুষ্ঠানে পশু উৎসর্গ ও সংহতিমূলক রীতি পালন করা)। অন্যদিকে যখন তোমরা নিরাপদ থাক তখন যে ব্যক্তি হজ্জ পর্যন্ত উমরা করার সুযোগ নেয়, তাহলে (তার জন্য কা’বায় পৌঁছানোর) হাদিয়া হিসেবে যা সহজ হয় (তাই যথেষ্ট)। পক্ষান্তরে যে ব্যক্তি তা পায় না (অর্থাৎ হাদিয়া পায় না বা হাদিয়া দেয়াতে অংশগ্রহণের সামর্থ্য পায় না) তাহলে (দায়িত্ব হচ্ছে) হজ্জের মধ্যে তিন দিন সিয়াম করা (রোজা রাখা) এবং সাতদিন যখন তোমরা ফিরে যাবে তখন। (তার ক্ষেত্রে) এভাবেই হবে পূর্ণ দশ। এ অবকাশ তার জন্য যার পরিবার পরিজন ‘আল মাসজিদুল হারামের’ উপস্থিতি নয় (অর্থাৎ হারাম এলাকার বাসিন্দা নয়)। তোমরা স্রষ্টা-সচেতন হও। এবং জেনে রাখো যে, নিশ্চয় আল্লাহ শাস্তিদানে কঠোর।
২:২১৭ :: তারা তোমাকে জিজ্ঞাসা করে হারাম মাস (অর্থাৎ বিধিবদ্ধ যুদ্ধ বিরতির ও সংরক্ষিত মাস) সম্পর্কে, সেটাতে যুদ্ধ করা প্রসঙ্গে। বলো, “সেটাতে (তথা কোনো হারাম মাসে) যুদ্ধ করা অনেক বড় গুনাহ। এবং আল্লাহর পথ থেকে বাধা দেয়া ও তাঁর প্রতি কুফর (অবিশ্বাস ও অকৃতজ্ঞতা) করা এবং ‘আল মাসজিদুল হারাম’ থেকে বাধা দেয়া এবং সেটির যথোপযুক্ত ব্যক্তিদেরকে তা থেকে বহিষ্কার করা আল্লাহর কাছে সবচেয়ে বড় গুনাহ। এবং ফিতনা (ধর্মীয় স্বাধীনতা হরণ এবং ভিন্ন ধর্ম অবলম্বনের কারণে নির্যাতন) হত্যার চেয়েও গুরুতর গুনাহ। এবং তারা তোমাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করা থেকে থামবে না, যতক্ষণ না তোমাদেরকে তোমাদের দ্বীন (জীবনব্যবস্থা) থেকে ফিরিয়ে দিতে পারে, যদি তাদের সাধ্যে কুলায়। এবং তোমাদের মধ্য থেকে যে তার দ্বীন (জীবনব্যবস্থা) থেকে ফিরে যাবে তারপর কাফির (সত্য প্রত্যাখ্যানকারী) অবস্থায়ই মৃত্যুবরণ করবে, তারাই এমন লোক যাদের আমলসমূহ দুনিয়াতে ও আখিরাতে বরবাদ হয়ে যাবে। এবং তারাই (দোযখের) আগুনে শাস্তিপ্রাপ্ত হবে। তারা তাতে স্থায়ী হবে।
৫:২ :: হে মু’মিনগণ, তোমরা আল্লাহর উদ্দেশ্যে নির্ধারিত নিদর্শনসমূহকে এবং কোনো হারাম মাসকে (অর্থাৎ বিধিবদ্ধ যুদ্ধ বিরতির ও সংরক্ষিত মাসকে) এবং (কা’বায় পৌঁছানোর) হাদিয়াকে এবং ক্বালায়িদকে (বিভিন্ন রাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত ও ব্যবস্থাপনা প্রতিনিধিদেরকে) অবমাননা / অবমূল্যায়ন করো না। এবং ‘আল বাইতুল হারামের’ (সংরক্ষিত প্রতিষ্ঠানের) অভিযাত্রীদেরকেও অবমাননা করো না, যারা আল্লাহর অনুগ্রহ ও সন্তুষ্টি অন্বেষণ করে। এবং যখন তোমরা হুরুম (হারাম মাসসমূহ) এর বাহিরে থাকো তখন (স্থলভাগের) শিকার করতে পার। আর কোনো সম্প্রদায়ের এরূপ শত্রুতা যে, তারা তোমাদেরকে ‘আল মাসজিদুল হারামে’ গমনে বাধা দিয়েছিল, তা যেন তোমাদেরকে অপরাধপ্রবণ না করে যে, তোমরা বাড়াবাড়ি করে ফেল। আর তোমরা সদাচার ও স্রষ্টা-সচেতনতার বিষয়ে একে অন্যকে সহযোগিতা করো এবং পাপ ও সীমালংঘনের কাজে একে অন্যকে সহযোগিতা করো না। আর আল্লাহর বিষয়ে সচেতন হও। নিশ্চয় আল্লাহ শাস্তিদানে কঠোর।
৭:২৯ :: বলো, ‘আমার প্রভু আদেশ করেছেন ন্যায়বিচার করার জন্য’। এবং তোমরা প্রত্যেক মাসজিদে তোমাদের (যথার্থ) লক্ষ্যকে / ব্যক্তিত্বকে প্রতিষ্ঠা করো। এবং তাঁকে (আল্লাহকে) ডাকো তাঁরই জন্য জীবনব্যবস্থাকে একনিষ্ঠ করে নিয়ে। যেভাবে তিনি তোমাদেরকে সৃষ্টি করেছেন সেভাবে তোমরা ফিরে আসবে।
৭:৩১ :: হে আদম সন্তান, তোমরা প্রত্যেক মাসজিদে তোমাদের সৌন্দর্য (সুন্দর পোশাক) গ্রহণ করো। এবং খাও ও পান করো এবং অপচয় করো না। নিশ্চয় তিনি অপচয়কারীদেরকে ভালবাসেন না।
৮:৩৪ :: তবে এখন তাদের কী অধিকার আছে যে, তিনি তাদেরকে আযাব দিবেন না এ অবস্থায় যে, তারা বাধা দিচ্ছে ‘আল মাসজিদুল হারাম’ থেকে? অথচ তারা উহার তত্ত্বাবধায়ক নয়। কেউই উহার তত্ত্বাবধায়ক নয়, স্রষ্টা-সচেতনগণ ছাড়া। কিন্তু তাদের অধিকাংশই (আসমানী কিতাবের) কোন জ্ঞান রাখে না।
৯:৭ :: আল্লাহ ও তাঁর রসূলের কাছে কিভাবে মুশরিকদের জন্য কোনো চুক্তি বহাল থাকবে? তাদের সাথে ছাড়া, যাদের সাথে তোমরা ‘আল মাসজিদুল হারামের’ প্রাঙ্গনে চুক্তি করার পর (তারা তা ভঙ্গ করে নি), সুতরাং যতক্ষণ তারা তোমাদের জন্য (চুক্তির উপর) প্রতিষ্ঠিত থাকে, তোমরাও তাদের জন্য (চুক্তির উপর) প্রতিষ্ঠিত থাক। নিশ্চয় আল্লাহ তো স্রষ্টা-সচেতনদেরকেই ভালবাসেন।
৯:১৭ :: মুশরিকদের অধিকার নেই যে, তারা আল্লাহর মাসজিদসমূহের ব্যবস্থাপনা করবে। অথচ তারা নিজেরাই নিজেদের কুফরের (আল্লাহর বিধানের পরিবর্তে পূর্বপুরুষের ঐতিহ্য অনুসরণের) সাক্ষ্য দেয়। তারাই এমন লোক যাদের আমলসমূহ বরবাদ হয়ে গেছে। এবং তারা (জাহান্নামের) আগুনে স্থায়ী হবে।
৯:১৮ :: নিশ্চয় তারাই আল্লাহর মাসজিদসূহের ব্যবস্থাপনা করবে (ব্যবস্থাপনার অধিকার রাখে) যারা আল্লাহর প্রতি ও আখিরাত দিবসের প্রতি ঈমান রাখে এবং সালাত প্রতিষ্ঠা করে এবং যাকাত প্রদান করে এবং আল্লাহ ছাড়া কাউকে ভয় করে না। আশা করা যায় যে, তারাই পথনির্দেশ গ্রহণকারীদের অন্তর্ভুক্ত থাকবে।
৯:১৯ :: তোমরা কি হাজীদেরকে পানি পান করানো এবং ‘আল মাসজিদুল হারামের’ ব্যবস্থাপনা করাকে ঐ ব্যক্তির কাজের সমান বিবেচনা করেছো যে আল্লাহর প্রতি ও আখিরাত দিবসের প্রতি ঈমান (সুদৃঢ় বিশ্বাস) করে এবং (এর ভিত্তিতে) আল্লাহর পথে (তথা আল্লাহ প্রদত্ত বিধি-ব্যবস্থা বাস্তবায়নে) সর্বাত্মক প্রচেষ্টা করে। তারা আল্লাহর কাছে সমান নয়। এবং আল্লাহ জালিম সম্প্রদায়কে হিদায়াত করেন না।
৯:২৮ :: হে মু’মিনগণ, নিশ্চয় মুশরিকগণ (মানসিকভাবে) অপবিত্র। সুতরাং তারা যেন তাদের এই চান্দ্রবর্ষের পরে এবং ‘আল মাসজিদুল হারামের’ কাছে আসতে না পারে। এবং যদি তোমরা দরিদ্রতার আশংকা করো, তবে শীঘ্রই আল্লাহ তোমাদেরকে তাঁর অনুগ্রহ দ্বারা স্বচ্ছল করে দিবেন, যদি তিনি ইচ্ছা করেন। নিশ্চয় আল্লাহ মহাজ্ঞানী ও মহাবিজ্ঞ।
৯: ১০৭ :: এবং যারা মাসজিদকে গ্রহণ করেছে ক্ষতি সাধন, কুফর (সত্য প্রত্যাখ্যান) এবং মু’মিনদের মধ্যে বিভেদ সৃষ্টি করার (তথা ঐক্যের মূলনীতিকে উপেক্ষা করার) উদ্দেশ্যে এবং সেই ব্যক্তির ঘাঁটি হিসাবে ব্যবহার করার উদ্দেশ্যে যে আগে থেকেই আল্লাহর এবং তাঁর রসূলের (উপস্থাপিত মতাদর্শের) সাথে সাংঘর্ষিকতায় লিপ্ত হয়েছে। এবং তারা কসম করে বলবে, “আমরা উত্তম কিছু করা ছাড়া অন্যরূপ ইচ্ছা করিনি”। এবং আল্লাহ সাক্ষ্য দিচ্ছেন যে, নিশ্চয় তারা মিথ্যাবাদী।
৯: ১০৮ :: তুমি কখনোই তাতে (তথা তাদের অধিগৃহীত মাসজিদে) দাঁড়াবে না। নিশ্চয় যে মাসজিদ প্রথম দিন থেকেই স্থাপিত হয়েছে স্রষ্টা-সচেতনতার উপর (ভিত্তি করে), সেটাই অধিক উপযোগিতা রাখে যে, তুমি সেটাতেই দাঁড়াবে। সেটাতে ঐ লোকেরা (আত্মনিয়োজিত) রয়েছে যারা পছন্দ করে যে, তারা (জীবন যাপনের ক্ষেত্রে) পবিত্রতা অর্জন করবে। এবং আল্লাহ পবিত্রতা অর্জনকারীদেরকেই ভালবাসেন।
১৭:১ :: পবিত্র সেই সত্তা যিনি ভ্রমণে নিয়েছেন (ইসরা করিয়েছেন) তাঁর বান্দাকে একটি রাতে, ‘আল মসজিদুল হারাম’ থেকে ‘আল মসজিদুল আকসা’র দিকে, যার চারপাশকে বরকতময় করা হয়েছে, যেন আমি তাকে আমার নিদর্শনসমূহের থেকে দেখাই। নিশ্চয় তিনি সর্বশ্রোতা ও সর্বদ্রষ্টা।
১৭:৭ :: যদি তোমরা ভালো কাজ করে থাকো, তাহলে তোমরা ভালো কাজ করেছো তোমাদের নিজেদের জন্য। এবং যদি তোমরা মন্দকাজ করে থাকো, তাহলে উহাও (করেছো তোমাদের নিজেদেরই বিরুদ্ধে)। তারপর যখন এসেছে দ্বিতীয় ওয়াদার সময় (তখন আমি আমার বান্দাদেরকে প্রেরণ করেছিলাম ১৭:৫), তারা কালিমাময় করার জন্য তোমাদের মুখমন্ডলকে, এবং তারা মসজিদে প্রবেশ করার জন্য যেমনভাবে উহাতে (মাসজিদে) প্রবেশ করেছে প্রথম বারে (পাঠানো বান্দাগণ); এবং তারা ধ্বংস করার জন্য, যা-ই তাদের আয়ত্তে আসে।
১৮:২১ :: এবং এভাবে আমি (মানুষকে) জানিয়ে দিয়েছিলাম তাদের (আসহাবে কাহাফের) ব্যাপারে। যেন তারা জানতে পারে যে, আল্লাহর ওয়াদা সত্য। এবং এও যে, শেষ ঘণ্টা আসবেই, উহাতে কোন সন্দেহ নেই। (উল্লেখ্য) যখন (আসহাবে কাহাফের মৃত্যুর পরবর্তীতে এ ঘটনার প্রকৃত শিক্ষা বিস্মৃত হয়ে) তারা (জনসাধারণ) তাদের করণীয় বিষয়ে পরস্পর বিবাদ করছিলো। তখন তারা (কয়েকজন) বলেছিলো, “তাদের স্মরণার্থে একটি স্মৃতিসৌধ বানাও। তাদের প্রভুই ভাল জানেন তাদের (মর্যাদা) সম্পর্কে”। (কিন্তু) যারা তাদের করণীয় বিষয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণে বিজয়ী হয়েছে তারা বলেছিলো, “অবশ্যই আমরা গ্রহণ / নির্মাণ করবো তাদের স্মরণার্থে একটি মাসজিদ”।
২২:২৫ :: নিশ্চয় যারা কুফর (সত্য অবিশ্বাস ও প্রত্যাখ্যান) করেছে এবং আল্লাহর পথ থেকে বাধা দেয় এবং আল মাসজিদুল হারাম থেকেও বাধা দেয়, যেটিকে আমি সেটির ক্ষেত্রে আত্মনিয়োজিত/ স্থানীয়দের (৯) জন্য এবং সেটিতে গমনাগমনকারী / অস্থানীয়দের জন্য (প্রবেশাধিকার, নিরাপত্তা বিধান ও বরকত বণ্টন বিষয়ে) সমান করেছি, এবং যে সেটির মধ্যে অন্যায়-অত্যাচার করতে ইচ্ছা করে আমি তাকে কষ্টদায়ক শাস্তির (অর্থাৎ জাহান্নামের) স্বাদ আস্বাদন করাবো।
(৯) আকিফ বলতে বুঝায় আল মাসজিদুল হারামে ই’তিকাফকারী বা ধ্যানমগ্ন ও আত্মনিয়োজিত ব্যক্তিবর্গ। এখানে পরবর্তী শব্দ গমনাগমনকারীর তুলনায় আকিফ বলতে বিশেষ করে স্থানীয়ভাবে বসবাসরত কর্মচারী প্রশাসনকে বুঝায়।
২২:৪০ :: যাদেরকে তাদের নিজেদের ঘরবাড়ি থেকে অন্যায়ভাবে বের করে দেয়া হয়েছে শুধু এ কারণে যে,তারা বলে,‘রব্বুনাল্লাহ’ (আল্লাহ আমাদের প্রভু)। এবং যদি আল্লাহ (তাঁর বিধানের বা প্রাকৃতিক ব্যবস্থার মাধ্যমে) মানুষকে প্রতিহত না করতেন তাদের একদল দ্বারা অন্য দলকে, তাহলে অবশ্যই বিধ্বস্ত করা হতো আশ্রম/মঠ (সওয়ামি’) (১০) , আন্তর্জাতিক চুক্তি ও বাণিজ্যকেন্দ্র (বিয়া’) (১১) , উপাসনালয় (সালাওয়াত) (১২) এবং মাসাজিদ (১৩) যেগুলোতে আল্লাহর নাম অধিক স্মরণ করা হয়। এবং নিশ্চয় আল্লাহ তাকে সাহায্য করেন যে তাঁকে সাহায্য করে। নিশ্চয় আল্লাহ ক্ষমতাবান, শক্তিমান।
(১০) নৈতিক সংশোধন ও প্রশিক্ষণমূলক স্বল্পকালীন অবস্থানের কেন্দ্রসমূহ, খৃস্টান ধর্মাবলম্বী ও অন্যান্যদের আশ্রম/মঠ
(১১) ক্রয়বিক্রয় চুক্তি, অঙ্গীকার ও শপথ অনুষ্ঠানের কেন্দ্রসমূহ
(১২) যোগাযোগ ও সমর্থন যোগানোর কেন্দ্রসমূহ, ভজন-মন্দির, বিশেষ করে ইহুদি ধর্মাবলম্বীদের উপাসনাগৃহ (সালাতের স্থান)
(১৩) মাসজিদসমূহ, সাজদাহ সম্পাদনের কেন্দ্রসমূহ, আল্লাহর বিধান বাস্তবায়নের প্রতিষ্ঠানসমূহ
৪৮:২৫ :: তারাই এমন লোক যারা কুফর (সত্য অবিশ্বাস ও প্রত্যাখ্যান) করেছে এবং তোমাদেরকে ‘আল মাসজিদুল হারাম’ থেকে বাধা দিয়েছে এবং (কা’বায় পৌঁছানোর) হাদিয়াকে সেটার যথাস্থানে পৌঁছানো থেকে আটকে দেয়া হয়েছে। এবং যদি না থাকতো এমন মু’মিন পুরুষ ও মু’মিন নারী, যাদেরকে তোমরা (মু’মিন হিসেবে) জানতে না, তাই তোমরা তাদেরকে পর্যুদস্ত করতে, তাই তাদের প্রেক্ষিতে তোমরা অজ্ঞতাবশত কলংকযুক্ত হতে, (তাহলে তিনি বিরত রাখতেন না)। (তিনি বিরত রেখেছিলেন) যেন আল্লাহ তাকে তাঁর রহমতের মধ্যে প্রবেশ করান যাকে তিনি ইচ্ছা করেন। যদি তারা পৃথক থাকতো তাহলে আমি (যুদ্ধ থেকে বিরত না রেখে) তাদের মধ্যকার কাফিরদেরকে (সত্য অবিশ্বাস ও প্রত্যাখ্যানকারীদেরকে) কষ্টদায়ক শাস্তি দিতাম।
৪৮:২৬ :: যখন কাফিরেরা (সত্য অবিশ্বাস ও প্রত্যাখ্যানকারীরা) তাদের অন্তরে উগ্রতা জাগিয়ে তুললো, জাহেলিয়াতের উগ্রতা, তখন আল্লাহ রসূলের ও মু’মিনদের উপর প্রশান্তি নাজিল করলেন এবং তাদের জন্য ‘কালিমাতুত তাক্বওয়াকে’ (স্রষ্টা-সচেতনতা অবলম্বনের নির্দেশ বাণীকে) অপরিহার্যরূপে কার্যকর করে দিলেন। এবং তারাই ছিল এর সবচেয়ে বেশি হক্বদার এবং এর যোগ্য অধিকারী। এবং আল্লাহ সকল বিষয়ে জ্ঞানী।
৭২:১৮ :: নিশ্চয় মাসজিদসমূহ আল্লাহর জন্য। সুতরাং তোমরা আল্লাহ ছাড়া কারো কাছে দুআ করো না।
# মাসজিদ সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্যের জন্য ‘আল বাইত’ সম্পর্কিত আয়াতসমূহও অধ্যয়ন করা প্রয়োজন। তাই নিম্নে এ সম্পর্কে আলোকপাত করা হলো:
‘আল বাইত’ ব্যবহৃত হয়েছে ৭ স্থানে: ২:১২৫:৩, ২:১২৭:৬, ২:১৫৮:৯, ৩:৯৭:১৪, ৮:৩৫:৫, ২২:২৬:৫, ১০৬:৩:৪। একে ‘আল হারাম’ (সংরক্ষিত) বিশেষণ যোগ করে ‘আল বাইতুল হারাম’ (সংরক্ষিত প্রতিষ্ঠান) বলা হয়েছে ২ স্থানে: ৫:২:১৭, ৫:৯৭:৪। এছাড়া একে ‘আওয়ালা বাইত’ (প্রথম প্রতিষ্ঠান) বলা হয়েছে ১ স্থানে: ৩:৯৬:৩। ‘আল বাইতিল আতীক্ব’ (প্রাচীন, চিরায়ত ও স্বাধীন প্রতিষ্ঠান) বলা হয়েছে ২ স্থানে: ২২:২৯:৭, ২২:৩৩:১০। ‘আল বাইতুল মা’মূর’ (আবাদকৃত, সঞ্জীবিত, প্রাণবন্ত প্রতিষ্ঠান) বলা হয়েছে ১ স্থানে: ৫২:৪:১।
কা’বা বা ‘আল বাইতকে’ আল্লাহ ‘বাইতিয়া’ (আমার বাইত) বলে উল্লেখ করেছেন মর্মে এসেছে ২ স্থানে: ২:১২৫:১৮, ২২:২৬:১২ এবং ইবরাহীম (সা.) ‘বাইতিকাল মুহাররাম’ (আপনার সংরক্ষিত বাইত) বলে উল্লেখ করেছেন মর্মে এসেছে ১ স্থানে: ১৪:৩৭:১১।
ক্বিবলা হিসেবে প্রতিষ্ঠিত একাধিক বাইতকে বুঝাতে ‘বুয়ূত’ (বাইতসমূহ/প্রতিষ্ঠানসমূহ) ব্যবহৃত হয়েছে ২ স্থানে: ১০:৮৭:৯, ২৪:৩৬:২।
‘আল বাইতুল হারাম’ এর প্রাঙ্গনে এর পক্ষ থেকে কেন্দ্রীয় ব্যবস্থাপনার জন্য যে প্রতিষ্ঠান তাকে ‘আল মাসজিদুল হারাম’ বলা হয়। ‘আল মাসজিদুল হারাম’ শব্দটি ব্যবহৃত হয়েছে ১৫ স্থানে: ২:১৪৪:১৩, ২:১৪৯:৭, ২:১৫০:৭, ২:১৯১:১৫, ২:১৯৬:৬৫, ২:২১৭:১৭, ৫:২:৩৪, ৮:৩৪:৯, ৯:৭:১৩, ৯:১৯:৫, ৯:২৮:৯, ১৭:১:৭, ২২:২৫:৮, ৪৮:২৫:৬, ৪৮:২৭:৮।
কা’বা, আল বাইত ও আল মাসজিদুল হারাম সম্পর্কিত আয়াতের সমন্বিত তালিকা নিম্নরূপ:
২:১২৫, ২:১২৭, ২:১৪৪, ২:১৪৯, ২:১৫০, ২:১৫৮, ২:১৯১, ২:১৯৬, ২:২১৭, ৩:৯৬, ৩:৯৭, ৫:২, ৫:৯৫, ৫:৯৭, ৮:৩৪, ৮:৩৫, ৯:৭, ৯:১৯, ৯:২৮, ১০:৮৭, ১৪:৩৭, ১৭:১, ২২:২৫, ২২:২৬, ২২:২৯, ২২:৩৩, ২৪:৩৬, ৪৮:২৫, ৪৮:২৭, ৫২:৪, ১০৬:৩।
কা’বা হচ্ছে বাইতুল্লাহ তথা আল্লাহর নির্ধারিত স্থানে আল্লাহর নির্দেশে প্রতিষ্ঠিত প্রতিষ্ঠান, মানবজাতির জন্য প্রতিষ্ঠিত ‘আওয়ালা বাইত’ বা আদি গৃহ (প্রথম প্রতিষ্ঠান), ‘বাইতুল আতিক’ বা সাম্য-মৈত্রী-স্বাধীনতার প্রতীকবহ চিরায়ত মহতী প্রতিষ্ঠান, ‘আল বাইত’ বা পবিত্র প্রতিষ্ঠান, ‘আল বাইতুল হারাম’ বা বিশেষ সংরক্ষিত প্রতিষ্ঠান। আল্লাহর নির্দেশিত স্থানে নবী ইবরাহীম ও ইসমাইল (সালামুন আলাইহিম) ‘আল বাইত’ (কা’বা) নির্মাণ / পুন:নির্মাণ করেন।
কা’বাকে ঘিরে প্রতিষ্ঠিত মাসজিদটিকে বা প্রতিষ্ঠানকে ‘আল মাসজিদুল হারাম’ বলা হয়। কা’বা ও ‘আল মাসজিদুল হারামের’ চতুর্দিকের এলাকাকে হারাম বা সংরক্ষিত এলাকা বলা হয়। এ এলাকাটিকে নবী ইবরাহীম তাঁর আদর্শিক অবস্থান গ্রহণের অঞ্চল হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেন, যার ফলে এটার ক্ষেত্রে ‘মাক্বামে ইবরাহীম’ বা ইবরাহীমের আদর্শিক অবস্থানকে একটি নিদর্শন হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে।
মাসজিদ শব্দের অর্থ এবং মাসজিদের ভূমিকা
মাসজিদ শব্দটির অর্থ হলো ‘সাজদাহর স্থান, আল্লাহর বিধিবিধান শুনা ও মানার অনুশীলন করার প্রতিষ্ঠান’। মাসজিদ সম্পর্কিত আয়াতসমূহের সমন্বিত অধ্যয়ন থেকে বুঝা যায় যে, মাসজিদ শুধুমাত্র আনুষ্ঠানিক সালাত করার স্থান নয়, বরং এটি আল্লাহর বিধানকে বাস্তবায়ন করার সামগ্রিক ব্যবস্থাপনার সাথে সম্পর্কিত প্রতিষ্ঠান।
মাসজিদের ভূমিকা সম্পর্কে আয়াতসমূহের নির্দেশনা নিম্নরূপ:
(১) মাসজিদসমূহ আল্লাহর জন্য, তাই এতে আল্লাহ ছাড়া অন্য কারো কাছে দুআ করা যাবে না। অর্থাৎ মাসজিদকে যাবতীয় শিরকের অনুপ্রবেশ থেকে পবিত্র রাখতে হবে।
(২) যারা মাসজিদের সঠিক প্রকৃতিকে বিনষ্ট করে আল কুরআনে তাদেরকে সবচেয়ে বড় জালিম বলে চিহ্নিত করা হয়েছে। আল্লাহ যেভাবে তাঁর নাম স্মরণ করতে নির্দেশনা দিয়েছেন তথা আল কুরআনে যেভাবে আল্লাহর পরিচয় তুলে ধরা হয়েছে মাসজিদে সেভাবে আল্লাহকে স্মরণ করতে যারা বাধা দেয় তাদের কোনো অধিকারই নেই যে, তারা মাসজিদে প্রবেশ করবে। তবে এরূপ অপপ্রয়াস করলে ধরাশায়ী হবে বলে ভীত-সন্ত্রস্ত থাকার পরিস্থিতিতেই শুধু তাদেরকে মাসজিদে প্রবেশের সুযোগ দেয়া যাবে।
(৩) বিশ্বব্যাপী বিশ্বাসীদের আদর্শিক বিশ্বকেন্দ্র (ক্বিবলা) হিসেবে ‘আল মাসজিদুল হারামকে’ নির্ধারণ করে দেয়া হয়েছে, যেটিকে বিশ্বব্যাপী মানবজাতির মধ্যে বিশ্বপ্রভুর বিধান বাস্তবায়নের জন্য মূল প্রতিষ্ঠান হিসেবে স্থাপন করা হয়েছে। তাই বিশ্বাসীরা পৃথিবীর যে দেশেই অবস্থান করুক না কেন তাদেরকে এ কেন্দ্রের দিকে মুখ ফিরাতে হবে তথা এটিকে সাংবিধানিক কেন্দ্রের মর্যাদায় গ্রহণ করতে হবে। এক্ষেত্রে বিতর্ককারীদের বিতর্ককে উপেক্ষা করে আল্লাহ প্রদত্ত হিদায়াত অনুযায়ী কার্যক্রম সম্পন্ন করতে হবে। এছাড়াও প্রত্যেক মাসজিদে স্বীয় লক্ষ্যকে সঠিক জীবনব্যবস্থার ভিত্তিতে প্রতিষ্ঠিত রাখতে হবে। অর্থাৎ সকল মাসজিদকেই ক্বিবলারূপে (উপকেন্দ্ররূপে) গ্রহণ করতে হবে। মাসজিদে গমনের ক্ষেত্রে যথাসাধ্য সুন্দর পোশাক (proper dress etiquette, official decorum and maintain of dress code) পরিধান করা উচিত।
(৪) ‘ইতিকাফে’র স্থান হিসেবেও মাসজিদের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে। এ প্রতিষ্ঠানের গুরুত্বপূর্ণ কার্যক্রমের জন্য কিছু আত্মনিয়োজিত ব্যক্তিকে স্বল্পকালীন ক্রমাগত অবস্থানের তথা দিন-রাত বিশেষ কর্মসূচী বাস্তবায়নে নিমগ্ন থাকা প্রয়োজন হলে তারা মাসজিদে অবস্থান করবে। এছাড়া আল্লাহর বিধি-বিধান বুঝার বা আল্লাহর স্মরণের জন্য কিছুদিন বিশেষভাবে ধ্যানমগ্নতার সাথে অতিবাহিত করতে চাইলে মাসজিদে অবস্থান করবে। এ বিষয়টিকে ‘ইতিকাফ’ বলে। ই’তিকাফ উপলক্ষে মাসজিদে অবস্থানকালে স্ত্রী সহবাস করা যাবে না।
(৫) ‘আল মাসজিদুল হারামকে’ ইতিকাফকারী (তাতে ধ্যানচর্চাকারী ও কোনো নির্দিষ্ট সময়কালে সার্বক্ষণিক আত্মনিয়োজিত), তাওয়াফফারী (গমনাগমনকারী), ক্বিয়ামকারী (এর নীতি আদর্শ বাস্তবায়নকারী), রুকূ'কারী (এর আদর্শের প্রতি বিনত) ও সাজদাহকারীদের (এর নীতিমালা মান্যকারী ও সম্মান প্রদর্শনকারীদের) জন্য পবিত্র রাখতে হবে অর্থাৎ নীতি আদর্শ পরিপন্থী কিছু যেন তাতে সংঘটিত হতে না পারে সেটি নিশ্চিত করতে হবে। তাই মাসজিদ হলো এসব কর্মকাণ্ড সম্পাদনের স্থান। মুসলিম উম্মাহর যাবতীয় কার্যক্রম মাসজিদ কেন্দ্রিক আবর্তিত হবে। যেমন, এতে সালাত সম্পাদনের পাশাপাশি সালাত শেষে উত্তরাধিকার বণ্টনের জন্য ওয়াসিয়্যাতের বিষয়ে সাক্ষ্য গ্রহণ করা হবে (সূরা মায়িদাহ ৫:১০৬)। এরূপ প্রতিষ্ঠানে সকাল সন্ধ্যায় আল্লাহর তাসবীহ / পবিত্রতা বর্ণনা, কুরআন তিলাওয়াত ও সালাতের ব্যবস্থা থাকতে হবে অর্থাৎ শিক্ষা-প্রশিক্ষণমূলক কর্মসূচী থাকতে হবে। আর্থ-সামাজিক উন্নয়নের জন্য অনুদান তহবিল থেকে বণ্টন এবং পারস্পরিক বিবাদ-বিসম্বাদের বিচার-মীমাংসার ব্যবস্থা থাকতে হবে। মাসজিদ বা ‘আল বাইত’, হজ্জ ও হাদিয়া সম্পর্কিত নির্দেশনা থেকে বুঝা যায় যে, মাসজিদে পর্যটকদের ও সাময়িক আশ্রয় গ্রহণকারীদের (তথা সর্বপ্রকার ই'তিকাফকারীর) আপ্যায়নের ব্যবস্থাও থাকবে। এতে সমষ্টিগত কার্যক্রমের জন্য নিয়মিত ও বিশেষ পরামর্শসভার ব্যবস্থা থাকবে।
(৬) ‘আল মাসজিদুল হারাম’ বা সংরক্ষিত প্রতিষ্ঠানটির সাথে সম্পর্কিত বিশেষ নির্দেশ হলো ‘আল মাসজিদুল হারামের কাছে যুদ্ধ করা যাবে না, তবে যদি প্রতিপক্ষ সেখানে হামলা করে বসে তাহলে প্রতিরক্ষামূলক যুদ্ধ করা যাবে’। প্রতিরক্ষামূলক যুদ্ধের মাধ্যমে তাদেরকে প্রতিহত করার পর আন্তর্জাতিক যুদ্ধনীতি লংঘন করার কারণে আন্তর্জাতিক আদালতের বিচার প্রক্রিয়ায় তাদেরকে মৃত্যুদণ্ডে দণ্ডিত করতে হবে।
(৭) ‘আল মাসজিদুল হারামের’ প্রাঙ্গনে আন্তর্জাতিক যুদ্ধ বিরতির চুক্তি সম্পাদন করতে হবে। যারা ঐ চুক্তি লংঘন করবে না তাদের সাথে চুক্তির মেয়াদ পর্যন্ত যথানিয়মে চুক্তির শর্তাদি রক্ষা করতে হবে। মেয়াদান্তে পরিস্থিতি অনুসারে চুক্তি নবায়ন করা যেতে পারে।
(৮) ‘আল মাসজিদুল হারামের’ অভিযাত্রীদেরকে অবমাননা করা যাবে না এবং তাদেরকে অন্যায়ভাবে বাধা প্রদান করা যাবে না। এমনকি যদি অতীতে তারা বাধা প্রদান করেছিলো এরূপ হয়, তবুও তাদের প্রতি বিদ্বেষবশত ন্যায়ের সীমালংঘন করে তাদেরকে অবমাননা করা যাবে না। কোনো জনগোষ্ঠীকে অন্যায়ভাবে ‘আল মাসজিদুল হারাম’ থেকে বাধা প্রদান করলে তারা বাধা প্রদানকারীদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করার অধিকার প্রাপ্ত হবে।
(৯) মাসজিদের ব্যবস্থাপনার অধিকার তারাই রাখে যারা আল্লাহর প্রতি ঈমান রাখে এবং শিরক করে না, আখিরাতের প্রতি ঈমান রাখে এবং এর ভিত্তিতে আল্লাহর পথে জান-মাল দিয়ে সর্বাত্মক প্রচেষ্টা করে। তাই এ ধরনের ব্যক্তিদের মধ্য থেকে পরামর্শক্রমে যোগ্য ব্যক্তিদেরকে মাসজিদের ব্যবস্থাপনার দায়িত্বে নিয়োজিত করতে হবে। লক্ষণীয় যে, ‘আল মাসজিদুল হারামের’ ব্যবস্থাপনার বাহ্যিক কার্যক্রম সম্পন্ন করা, হাজীদেরকে পানি পান করানো ইত্যাদি বিষয়ের তুলনায় মাসজিদের ব্যবস্থাপনার উদ্দেশ্যগত বিষয়ে তথা প্রকৃত নীতিমালার ভিত্তিতে কল্যাণ কার্যক্রমের বিষয়ে ভূমিকা রাখা এবং আল্লাহ ও আখিরাতের প্রতি ঈমান রাখা অধিক গুরুত্ব ও মর্যাদার বিষয়।
(১০) ‘আল মাসজিদুল হারামের’ ব্যবস্থাপনাগত দায়িত্ব পালন এবং তাতে নিরাপত্তা পাওয়ার অধিকারের দিক থেকে সেটির স্থানীয় কর্মচারী প্রশাসন এবং অস্থানীয় গমনাগমনকারী প্রতিনিধিদের অধিকার সমান থাকবে।
(১১) ফাসাদ (নৈরাজ্য, বিশৃঙ্খলা) সৃষ্টিকারীদেরকে প্রতিহত না করলে তারা মাসজিদসমূহকে বিধ্বস্ত করে দেয়। তাই মাসজিদের সুরক্ষার প্রয়োজনে ফাসাদকারীদেরকে প্রতিহত করার জন্য তথা শান্তির জন্য যুদ্ধ পরিচালনা করা জরুরি হলে ফিতনার অবসান ঘটার পূর্ব পর্যন্ত যুদ্ধ চালিয়ে যেতে হবে। সুতরাং মাসজিদের ব্যবস্থাপনাগত কাজের অন্যতম একটি দিক হলো বিশ্ব নিরাপত্তার জন্য শান্তি মিশন হিসেবে যুদ্ধ প্রশিক্ষণ ও অভিযান পরিচালনা করা।
(১২) মাসজিদ থেকে বাধা প্রদানকারীদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করার ক্ষেত্রে অবশ্যই বেসামরিক লোকজনের ক্ষয়ক্ষতি এড়িয়ে যুদ্ধ করার পরিস্থিতি না থাকলে যুদ্ধ না করে অন্যভাবে পরিস্থিতির মোকাবেলা করা যায় কিনা সেদিকেই অগ্রাধিকার ভিত্তিতে লক্ষ রাখতে হবে।
(১৩) মাসজিদ বলতে কী বুঝায় এবং মাসজিদের ভূমিকা কিরূপ, তা নির্ণয়ের ক্ষেত্রে মাসজিদে দিরার বা ‘মানবজাতির ক্ষতি সাধনের উদ্দেশ্যে নির্মিত মাসজিদ’ সম্পর্কেও অনুধাবন করা প্রয়োজন। যে মাসজিদটি ‘প্রকৃত ঐক্যসূত্রকে বিনষ্ট করে বিভেদ সৃষ্টির জন্য, মানুষের ক্ষতি সাধনের জন্য এবং আল্লাহ ও তাঁর রসূলের উপস্থাপিত জীবনাদর্শের বিরুদ্ধতাকারী নেতৃত্বের ঘাঁটি হিসেবে ব্যবহারের জন্য’ নির্মিত হয়েছে তাকে ‘মাসজিদে দিরার’ বলা হয়। এ থেকে বুঝা যায় যে, নেতিবাচকভাবে এমন মাসজিদও হতে পারে, যা আল্লাহর বিধানের বিরুদ্ধতা করার জন্য স্থাপন করা হয়, সুতরাং ইতিবাচকভাবে সেই প্রতিষ্ঠানগুলোই ‘আল্লাহর মাসজিদে’ পরিণত হতে পারে যা আল্লাহর বিধি-বিধান চর্চার কেন্দ্র হিসেবে কার্যকর থাকে।
আল মাসজিদুল হারাম এবং অন্যান্য মাসজিদের সম্পর্ক ও পার্থক্য
মাসজিদ সম্পর্কিত আয়াতসমূহ থেকে সাধারণ মাসজিদসমূহ এবং ‘আল মাসজিদুল হারাম’ এর মধ্যে যে সম্পর্ক ও পার্থক্য জানা যায় তা নিম্নরূপ:
‘আল মাসজিদুল হারাম’ হচ্ছে মানবজাতির জন্য আল্লাহর নির্ধারিত বিশ্বকেন্দ্র বা মানবজাতির জাতীয় কেন্দ্র, পবিত্র প্রতিষ্ঠান এবং অনুরূপভাবে পৃথিবীর অন্যান্য যাবতীয় মাসজিদ হচ্ছে উপকেন্দ্র তথা স্থানীয় কেন্দ্র। এটাই হচ্ছে ‘আল মাসজিদুল হারামের’ সাথে অন্যান্য মাসজিদসমূহের স্বাভাবিক ও সাধারণ সম্পর্ক। ‘আল মাসজিদুল হারামের’ স্থান যেভাবে আল্লাহ কর্তৃক নির্ধারিত ও সংরক্ষিত, অন্যান্য মাসজিদের স্থানের ক্ষেত্রে তা নয়। বরং অন্যান্য মাসজিদ কোথায় নির্মিত হবে তা বাস্তব প্রয়োজন বা উপযোগিতার প্রেক্ষিতে মু’মিনদের পরামর্শভিত্তিক সিদ্ধান্তক্রমে নির্ধারিত হবে।
যদি কোনো মাসজিদের প্রকৃতি নষ্ট করা হয় বা কোনো মাসজিদকে গ্রহণ করা হয় মানবজাতির ধর্মীয় ক্ষতিসাধনের জন্য, মুসলিমদের বিরুদ্ধে ভাবাদর্শগত দ্বন্দ্বে লিপ্ত কারো ঘাঁটি হিসেবে ব্যবহার করার জন্য এবং মু’মিনদের মধ্যে বিভেদ সৃষ্টির জন্য তথা ‘আল মাসজিদুল হারামের’ ঐক্যের মূলনীতির পরিপন্থী অনুশীলনের জন্য তাহলে সেই মাসজিদে দাঁড়ানো যাবে না। বরং যেই মাসজিদ নির্মিত হয় তাক্বওয়ার (স্রষ্টা-সচেতনতার) ভিত্তিতে এবং যাতে ‘আল মাসজিদুল হারামের’ ঐক্যের মূলনীতি অনুশীলন করা হয় সেই মাসজিদেই দাঁড়াতে হবে। সেই মাসজিদ এমন হবে যে, তাতে যারা জীবন যাপনে পবিত্রতা অর্জন করতে পছন্দ করে তারা আত্মনিয়োজিত থাকবে।
অন্যদিকে ‘আল মাসজিদুল হারামকে’ সংরক্ষিত রাখা হবে, তাতে মুশরিকদের ব্যবস্থাগত অধিকার থেকে বহিষ্কৃত করে মু’মিনদের অধিভুক্ত করতে হবে, যেহেতু তা আল্লাহর নির্ধারিত বিশ্বকেন্দ্র, তাতে উপস্থিত ব্যবস্থাপনা যার হাতেই থাকুক না কেন হজ্জ থেকে বিরত না হয়ে তাতে হজ্জের জন্য যেতে হবে এবং সেটির প্রাঙ্গনে যারাই হামলা করবে তাদেরকে প্রতিহত করতে হবে এবং আন্তর্জাতিক আদালত প্রতিষ্ঠা করে বিচারিক প্রক্রিয়ায় মৃত্যুদণ্ডে দণ্ডিত করতে হবে।
তাহলে সাধারণ মাসজিদ এবং ‘আল মাসজিদুল হারামের’ ক্ষেত্রে মু’মিনদের অবস্থানগত নীতিতে পার্থক্য রয়েছে। ‘আল মাসজিদুল হারাম’ কেন্দ্রীয় মাসজিদ হওয়ার প্রেক্ষিতে অকেন্দ্রীয় মাসজিদসমূহের থেকে সেটির এ পার্থক্য তৈরি হয়েছে।
(প্রাসঙ্গিক আয়াতসমূহ: ৩:৯৬-৯৭, ২:১২৫, ২২:২৫-২৮, ৯:২৮, ২:২১৭, ২:১১৪, ৯:১০৭-১০৮)।
পরিশিষ্ট ৫: তাসবীহ
আল কুরআনে সালাত ও তাসবীহ সম্পর্কিত আয়াতসমূহ থেকে উভয়টির মধ্যে এক ধরনের সামঞ্জস্য প্রতীয়মান হয় কিন্তু তা সত্ত্বেও উভয়টি হুবহু একই বিষয় নয়। এ বিষয়ে ২৪:৪১ আয়াতটি লক্ষণীয়। সালাত ও তাসবীহের মধ্যে সম্পর্কের পাশাপাশি এর পার্থক্যও রয়েছে। যেমন, সালাত এরূপ আনুষ্ঠানিক শর্তসম্পন্ন যে, সেজন্য ওজু-গোসল-তায়াম্মুমের শর্ত রয়েছে এবং এর নির্দিষ্ট কাঠামো রয়েছে। কিন্তু তাসবীহ বিষয়টি সেরূপ নয়। তবে সালাতের জন্য যেমন কিছু ওয়াক্তের নির্দেশনা রয়েছে, তাসবীহের ক্ষেত্রেও তেমনি কিছু ওয়াক্তের নির্দেশনা রয়েছে। তাই অনেকে তাসবীহের ওয়াক্তসমূহকে সালাতের ওয়াক্তসমূহ হিসেবে হুবহু সমানভাবে হিসেব করে থাকেন। কিন্তু কুরআনে সালাতের ওয়াক্তের ক্ষেত্রে ওয়াক্তের পরিসীমা এবং তাসবীহের ওয়াক্তের ক্ষেত্রে ওয়াক্তের পরিসীমা ভিন্নরূপ। তাই সালাতের ওয়াক্ত সংখ্যার চেয়ে একই সময়সীমার মধ্যে তাসবীহের সাপেক্ষে ওয়াক্ত সংখ্যা আরো বেশি বলে প্রতীয়মান হয়। তাই এখানে তাসবীহের বিষয়টিও ভালোভাবে বুঝে নেয়ার জন্য এ বিষয়ের তথ্য সমন্বয় করা হলো।