বাংলাদেশের রাজনীতিতে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা একটি গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায় ছিল, যা নির্বাচনী প্রক্রিয়ায় স্বচ্ছতা, নিরপেক্ষতা এবং গ্রহণযোগ্যতা নিশ্চিত করতে সহায়ক ভূমিকা পালন করেছিল। ১৯৯৬ সালে ১৩তম সংবিধান সংশোধনীর মাধ্যমে প্রণীত এ ব্যবস্থা জনগণের আস্থা অর্জনে সক্ষম হয়েছিল। তবে ২০১১ সালে বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের রায়ে এ ব্যবস্থা অবৈধ ঘোষিত হয় এবং সংবিধানের ১৫তম সংশোধনীর মাধ্যমে এটি বাতিল করা হয়।
তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা যে কারণে প্রয়োজন
নিরপেক্ষ ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন নিশ্চিত করা
তত্ত্বাবধায়ক সরকার রাজনৈতিক প্রভাবমুক্ত একটি নির্বাচন পরিচালনার ব্যবস্থা করত। এটি ক্ষমতাসীন দলের প্রশাসনিক প্রভাব এড়িয়ে সাধারণ ভোটারদের স্বাধীন মতপ্রকাশের সুযোগ তৈরি করত।
রাজনৈতিক অস্থিরতা হ্রাস
তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে আস্থার সংকট দূর করতে সাহায্য করত। এটি বিরোধী দলগুলোর দাবির প্রতি সাড়া দিয়ে একটি নিরপেক্ষ প্রক্রিয়া নিশ্চিত করত।
জনগণের আস্থা বৃদ্ধি
জনগণ বিশ্বাস করত যে তত্ত্বাবধায়ক সরকার নির্বাচন সুষ্ঠুভাবে পরিচালনা করবে। ফলে ভোটার উপস্থিতি বাড়ত এবং নির্বাচনের বৈধতা নিয়ে বিতর্ক কম হতো।
নির্বাচনী সহিংসতা রোধ
তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচনের আগে এবং পরে সহিংসতার আশঙ্কা কম থাকত, কারণ এটি কোনো রাজনৈতিক দলের পক্ষে কাজ করত না।
তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা এক সময় বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার জন্য গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিল। এটি বাতিলের সিদ্ধান্ত ক্ষমতাসীন দলের স্বার্থ রক্ষা করতে সহায়ক হলেও জনগণের আস্থা এবং রাজনৈতিক স্থিতিশীলতার জন্য ক্ষতিকর হয়েছে। সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনী পরিবেশ তৈরির জন্য হয়তো একটি বিকল্প পদ্ধতির কথা ভাবা যেতে পারে। তবে জনগণের আস্থা পুনরুদ্ধার এবং রাজনৈতিক অস্থিরতা কমানোর জন্য তত্ত্বাবধায়ক সরকারের মতো একটি নিরপেক্ষ ব্যবস্থার প্রয়োজনীয়তা আজও প্রকট।