Skip to Content

পঞ্চগড়, ময়মনসিংহ ও সিলেট বিভাগের সকল জেলায় প্রতিবন্ধী জনগোষ্ঠীর মূল দাবিতে ভোট গ্রহণ সম্পন্ন

তিন বিভাগের সকল জেলাতেই সর্বসম্মত ভোট সম্পন্ন, স্থানীয় পর্যায়ে গড়ে উঠছে নতুন ঐক্য, ডিপিও–ওপিডির সমন্বয়ে ঐতিহাসিক ভোট, প্রতিবন্ধী ভাতা বৃদ্ধি ও মৌলিক দাবির পক্ষে জোরাল সমর্থন


বাংলাদেশ ডিপিও কোয়ালিশনের উদ্যোগে পঞ্চগড়, ময়মনসিংহ ও সিলেট—এই তিনটি বিভাগের অন্তর্ভুক্ত সকল জেলায় প্রতিবন্ধী অধিকার আন্দোলনের দাবীর পক্ষে ভোট গ্রহণ সফলভাবে সম্পন্ন হয়েছে। দেশের প্রতিবন্ধী জনগোষ্ঠীর ন্যায্য অধিকার আদায়ে প্রস্তাবিত ৯ দফা দাবিকে সামনে রেখে এই ভোট আয়োজন করা হয়।

ভোট গ্রহণ কার্যক্রম দুটি ধাপে সম্পন্ন হয়। প্রথম ধাপে প্রতিটি জেলায় গঠন করা হয় ৭ জনের একটি ইলেক্টোরাল কলেজ বা নির্বাচক কমিটি, যেখানে স্থানীয় জেলা ও উপজেলা পর্যায়ের বিভিন্ন প্রতিবন্ধী ব্যক্তির সংগঠন, ডিপিও বা ওপিডির মনোনয়নের ভিত্তিতে সৎ, নিষ্ঠাবান, নিঃস্বার্থ ও প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের উন্নয়ন কর্মকাণ্ডে যুক্ত এমন সাতজন প্রতিনিধিকে নির্বাচন করা হয়। দ্বিতীয় ধাপে এই সাতজন প্রতিনিধি ৯ দফা দাবি বাস্তবায়নের পক্ষে বা বিপক্ষে ভোট প্রদান করেন। তারা শারীরিক, দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী, শ্রবণ ও বাক্-প্রতিবন্ধী, বুদ্ধিবৃত্তিক প্রতিবন্ধীতা, মানসিক স্বাস্থ্যজনিত সমস্যা, অটিজম ও স্নায়ুবিক প্রতিবন্ধীতা—সহ বহুমাত্রিক প্রতিবন্ধী নারী-পুরুষ ও শিশু; সকল শ্রেণির প্রতিবন্ধী সমাজের পক্ষ থেকে প্রতিনিধিত্ব করেন।

জেলা, উপজেলা ও তৃণমূলের অধিকাংশ প্রতিনিধিই ৯ দফা দাবির প্রতি সর্বসম্মত সমর্থন জানান। কয়েকটি জেলায় এক–দুইজন প্রতিনিধি ভোটদান থেকে বিরত থাকলেও তা মোট ফলাফলে কোনো প্রভাব ফেলে নি; প্রায় সব জেলায় সম্পূর্ণ নির্বাচক মণ্ডলীর ভোট ৯ দফা দাবির পক্ষে যায়। কারো পক্ষ থেকেই দাবির বিরুদ্ধে মত পাওয়া যায়নি।

ভোট তত্ত্বাবধান ও সমন্বয়ের কাজে যে সংগঠন সমূহ মূল অবদান রাখে, সেগুলোর উল্লেখ যোগ্য হচ্ছে, ডিজঅ্যাবিলিটি অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট সেন্টার (ডিডিসি), ন্যাশনাল ফেলোশিপ ফর দ্য অ্যাডভান্সমেন্ট অব ভিজুয়ালি হ্যান্ডিক্যাপড, ঢাকা ডিসএবল্ড পিপলস অর্গানাইজেশন টু ডেভেলপমেন্ট, আলোকিত ডিজেবল্ড স্বনির্ভর সোসাইটি, দৃষ্টি প্রতিবন্ধী উন্নয়ন পরিষদ (ডিপিইউপি), ডিজেবল্ড ডেভেলপমেন্ট সোসাইটি (ডিডিএস) নারায়ণগঞ্জ, ময়মনসিংহ-ডিপিওডি, এবং সিলেটের সমাজভিত্তিক প্রতিবন্ধী ও শিশু সুরক্ষা সংস্থা (সিবিডিসিপিও)। এ ছাড়া সমাজসেবা অধিদপ্তর, এনজিও ব্যুরো, নারী ও শিশু বিষয়ক দপ্তর, জয়েন্ট স্টকসহ সরকারের বিভিন্ন দপ্তর নিবন্ধিত স্থানীয় ডিপিও-ওপিডি সংগঠনগুলো সহযোগিতা প্রদান করে। বিশেষভাবে নারী নেতৃত্বাধীন ডিপিও ও ওপিডিগুলো মাঠ পর্যায়ের কাজে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখে।

যেসব জেলায় ভোট ইতিমধ্যে সম্পন্ন হয়েছে, সেগুলোর মধ্যে রংপুর, সিলেট এবং ময়মনসিংহ বিভাগের সবগুলো জেলা অন্তর্ভুক্ত—যথাক্রমে দিনাজপুর, গাইবান্ধা, কুড়িগ্রাম, লালমনিরহাট, নীলফামারী, পঞ্চগড়, রংপুর, ঠাকুরগাঁও; হবিগঞ্জ, মৌলভীবাজার, সুনামগঞ্জ, সিলেট; জামালপুর, ময়মনসিংহ, নেত্রকোনা এবং শেরপুর। এছাড়া বরিশাল বিভাগের ঝালকাঠি জেলা, চট্টগ্রাম বিভাগের খাগড়াছড়ি, রাঙ্গামাটি, চাঁদপুর, চট্টগ্রাম, কুমিল্লা, কক্সবাজার, ফেনী, লক্ষ্মীপুর ও নোয়াখালী জেলায় ভোট সম্পন্ন হয়েছে। ঢাকা বিভাগের গাজীপুর, গোপালগঞ্জ, ফরিদপুর, নারায়ণগঞ্জ, ঢাকা ও টাঙ্গাইলেও ভোট গ্রহণ শেষ হয়েছে। একইভাবে খুলনা বিভাগের খুলনা, নড়াইল, সাতক্ষীরা, যশোর ও চুয়াডাঙ্গা এবং রাজশাহী বিভাগের বগুড়া, চাঁপাইনবাবগঞ্জ, জয়পুরহাট, নওগাঁ, নাটোর, রাজশাহী ও সিরাজগঞ্জ জেলায় ভোট গ্রহণ ইতোমধ্যে সম্পন্ন হয়েছে।

অন্যদিকে যেসব জেলায় ভোট এখনো সম্পন্ন হয়নি বা ভোট চলমান রয়েছে, তার মধ্যে রয়েছে বরিশাল বিভাগের বরগুনা, বরিশাল, ভোলা, পটুয়াখালী ও পিরোজপুর। চট্টগ্রাম বিভাগের বান্দরবান ও ব্রাহ্মণবাড়িয়া । ঢাকা বিভাগের কিশোরগঞ্জ, মাদারীপুর, মানিকগঞ্জ, মুন্সীগঞ্জ, নরসিংদী, রাজবাড়ী এবং শরীয়তপুর। খুলনা বিভাগের বাগেরহাট, ঝিনাইদহ, কুষ্টিয়া, মাগুরা ও মেহেরপুর এবং রাজশাহী বিভাগের পাবনা ভোট সম্পন্ন না হওয়া জেলাগুলোর অন্তর্ভুক্ত।

৯ দফার মূল বিষয়গুলোর মধ্যে রয়েছে: প্রতিবন্ধী ভাতা পাঁচ হাজার টাকা নির্ধারণ, বাদ পড়া প্রতিবন্ধীদের ভাতার আওতায় আনা, অনিয়ম ও দুর্নীতি বন্ধ, স্নাতক বা উচ্চশিক্ষা সম্পন্ন প্রতিবন্ধীদের জন্য বিশেষ নির্বাহী আদেশে চাকরির ব্যবস্থা নিশ্চিত করা, এবং দীর্ঘদিনের অন্যান্য মৌলিক জনদাবি বাস্তবায়ন।

ভোট কার্যক্রম তত্ত্বাবধান করেন প্রতিবন্ধী জনগোষ্ঠির জাতীয় পর্যায়ের বিভিন্ন নেতৃবৃন্দ—মিসেস বাবলী বেগম, সেলিনা আলম, লাকী আকতার, মোঃ কামরুজ্জামান, মোঃ রুহুল কুদ্দুস,  রনজু মণ্ডল, তারেক হাসান, মাধব চন্দ্র সরকার, ইউনুছ দিদার, মিনি আক্তার, আমেনা খাতুন, মোকাম্মেল হোসেন, কাজী মহসিন কবির, মিন্টু চাকমা, শাহাদাত হোসেন, মমতাজ উদ্দিন মিলনসহ আরও অনেকে।

এই পুরো প্রক্রিয়া প্রতিবন্ধী সমাজের মধ্যে এক নতুন ঐক্যের বার্তা দিয়েছে। এর মাধ্যমে স্থানীয় জরিপের মাধ্যমে প্রতিবন্ধী জনগোষ্ঠীর প্রকৃত সংখ্যা নির্ধারণ সহজ হওয়ায় সরকারি নীতিনির্ধারণেও সহায়ক হবে বলে আশা করা হচ্ছে। বাকী পাঁচটি বিভাগে ভোট কার্যক্রম এখনো চলমান, এবং প্রতিদিন একটি করে জেলায় ভোট সম্পন্ন হচ্ছে। পুরো ভোট প্রক্রিয়া শেষ হলে দীর্ঘদিনের দাবী এই ৯ দফা দাবি বাস্তবায়ন আরও গতি পাবে—এমন প্রত্যাশা জানিয়েছে সচেতন মহল।


প্রতিবেদক:

ঢাকা থেকে নাজমুল ইসলাম

A Student of July Movement
একজন আন্দোলনকারী ছাত্রের অভ্যন্তরীণ যাত্রা, তার লড়াই, দুঃখ-কষ্ট এবং শেষ পর্যন্ত তার সংকল্প এবং সাহসিকতা