বাংলাদেশে প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের অধিকার ও সুরক্ষা নিশ্চিত করার জন্য বেশ কিছু আইন এবং আন্তর্জাতিক চুক্তি কার্যকর রয়েছে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল প্রতিবন্ধী ব্যক্তির অধিকার ও সুরক্ষা আইন, ২০১৩ এবং জাতিসংঘের প্রতিবন্ধী ব্যক্তির অধিকার বিষয়ক কনভেনশন (CRPD)। তবে, এসব আইনের বাস্তবায়ন করতে গিয়ে কিছু চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হতে হয়।
প্রতিবন্ধী সুরক্ষা আইন, ২০১৩:
এই আইনে উল্লেখিত গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলো হলো:
- শিক্ষা, স্বাস্থ্য, এবং কর্মসংস্থানে সুযোগ: প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের জন্য সুষম সুযোগ নিশ্চিত করা।
- অবকাঠামোগত উন্নয়ন: প্রতিবন্ধীবান্ধব অবকাঠামো নির্মাণ।
- আইনি সহায়তা ও অধিকার: বৈষম্যমূলক আচরণ বন্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ।
- পুনর্বাসন ব্যবস্থা: প্রতিবন্ধীদের জন্য প্রয়োজনীয় পুনর্বাসন ও সহায়তা নিশ্চিত করা।
CRPD (Convention on the Rights of Persons with Disabilities):
বাংলাদেশ ২০০৭ সালে এই চুক্তি স্বাক্ষর করে এবং ২০০৮ সালে তা অনুমোদন করে। এর মূল উদ্দেশ্য হলো প্রতিবন্ধীদের জন্য সমতা, মানবাধিকার, এবং স্বাধীনতার সুযোগ তৈরি করা।
বাস্তবায়নের চ্যালেঞ্জ:
- জ্ঞান ও সচেতনতার অভাব: অনেক ক্ষেত্রে আইন ও আন্তর্জাতিক চুক্তি সম্পর্কে জনসাধারণ এবং সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের পর্যাপ্ত জ্ঞান নেই।
- অপর্যাপ্ত বাজেট বরাদ্দ: প্রতিবন্ধীদের জন্য প্রয়োজনীয় বাজেট এবং সম্পদ বরাদ্দ সীমিত।
- অবকাঠামোর সীমাবদ্ধতা: সরকারি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের বেশিরভাগ ভবন এবং পরিবহন ব্যবস্থা প্রতিবন্ধীবান্ধব নয়।
- মানসিকতার সমস্যা: সমাজে এখনো অনেকের মধ্যে প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের প্রতি নেতিবাচক ধারণা বা বৈষম্যমূলক আচরণ রয়েছে।
- ডাটা ও পরিসংখ্যানের অভাব: প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের সঠিক সংখ্যা ও তাদের প্রয়োজন সম্পর্কে পর্যাপ্ত ডাটা না থাকায় কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ কঠিন হয়ে পড়ে।
- মনিটরিং ব্যবস্থার দুর্বলতা: আইন এবং নীতিমালার বাস্তবায়ন পর্যবেক্ষণ এবং মূল্যায়নের জন্য শক্তিশালী মনিটরিং ব্যবস্থা নেই।
- সহযোগিতা ও সমন্বয়ের অভাব: সরকারি, বেসরকারি, এবং আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোর মধ্যে কার্যকর সমন্বয়ের অভাব।
সমাধানের প্রস্তাবনা:
- সচেতনতা বৃদ্ধি: প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের অধিকার নিয়ে ব্যাপক প্রচারণা এবং শিক্ষার মাধ্যমে সচেতনতা সৃষ্টি।
- বাজেট বৃদ্ধি: প্রতিবন্ধীদের জন্য আলাদা তহবিল বরাদ্দ করা।
- প্রতিবন্ধীবান্ধব অবকাঠামো: স্কুল, অফিস, এবং গণপরিবহনকে প্রতিবন্ধীদের জন্য সুবিধাজনক করে গড়ে তোলা।
- কার্যকর মনিটরিং ব্যবস্থা: আইনের বাস্তবায়ন পর্যবেক্ষণের জন্য একটি স্বাধীন এবং দক্ষ সংস্থা প্রতিষ্ঠা।
- সমাজের দৃষ্টিভঙ্গি পরিবর্তন: শিক্ষামূলক কর্মসূচি এবং প্রচারণার মাধ্যমে প্রতিবন্ধীদের প্রতি সম্মানজনক আচরণ নিশ্চিত করা।
- স্থানীয় পর্যায়ে উদ্যোগ: ইউনিয়ন, উপজেলা, এবং জেলা পর্যায়ে প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের অধিকার সুরক্ষায় কার্যক্রম পরিচালনা।
- আন্তর্জাতিক সহযোগিতা: উন্নত দেশগুলোর অভিজ্ঞতা থেকে শিক্ষা নিয়ে স্থানীয়ভাবে প্রয়োগ।