Skip to Content

২০১৮ সালে ভোট চুরির মাধ্যমে অগণতান্ত্রিকভাবে ক্ষমতায় আসে আওয়ামী লীগ

 

·  তারিখ: ৩০ ডিসেম্বর ২০১৮

·  দল: আওয়ামী লীগ

·  অধিকারিত আসন: ৩০০ আসনের মধ্যে ২৫৮টি

·  বিরোধী দল: বিএনপি

·  বিএনপির আসন সংখ্যা: ৭টি

·  অন্যান্য বিরোধী দল: সীমিত আসন লাভ

·  বিজয়: আওয়ামী লীগের টানা তৃতীয়বারের মতো সরকার গঠন

২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত হয় বাংলাদেশের ১১তম জাতীয় সংসদ নির্বাচন। এটি বাংলাদেশের ইতিহাসে এক গুরুত্বপূর্ণ নির্বাচন হিসেবে পরিগণিত হলেও, এই নির্বাচনের ফলাফল এবং তা-সংক্রান্ত ঘটনা প্রবাহ নিয়ে দেশ-বিদেশে ব্যাপক বিতর্ক সৃষ্টি হয়। ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ এই নির্বাচনে বিপুল সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করে এবং টানা তৃতীয়বারের মতো সরকার গঠন করে। তবে, এই নির্বাচনের প্রক্রিয়া এবং ফলাফল নিয়ে নানা প্রশ্ন ও অভিযোগ উঠে আসে, যা অনেকের মতে দেশের গণতান্ত্রিক চর্চার ওপর গভীর প্রভাব ফেলেছে।

ভোট চুরির অভিযোগ

২০১৮ সালের নির্বাচনের প্রাক্কালে বিরোধী দলগুলো বিভিন্ন সময় অভিযোগ করে যে, নির্বাচনকে প্রভাবিত করতে সরকারি মদদে নানা রকম অনিয়মের আয়োজন করা হয়েছে। নির্বাচনের দিনই বেশ কিছু জেলায় গণমাধ্যমের প্রতিবেদনে উঠে আসে ভোটকেন্দ্র দখল, আগের রাতে ব্যালট বাক্স ভরে রাখা, বিরোধী দলের এজেন্টদের ভোটকেন্দ্র থেকে বের করে দেওয়া এবং ভোটারদের ভয়ভীতি প্রদর্শনের মতো গুরুতর অভিযোগ। এমনকি কিছু ভোটার অভিযোগ করেন, তারা ভোটকেন্দ্রে যাওয়ার আগেই তাদের ভোট অন্য কেউ দিয়ে দিয়েছে।

নির্বাচন পূর্ব প্রস্তুতি ও ক্ষমতার প্রভাব

আওয়ামী লীগ সরকারের অধীনে অনুষ্ঠিত এই নির্বাচনে প্রশাসন, আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী এবং বিচার বিভাগকে ক্ষমতাসীন দলের পক্ষে ব্যবহার করা হয়েছে বলে বিরোধী দল এবং বিভিন্ন স্বাধীন সংস্থা অভিযোগ করে। নির্বাচন পূর্ব সময়ে বিরোধী দল বিএনপির ওপর ব্যাপক দমন-পীড়ন চালানো হয়। দলের নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে মামলা, গ্রেফতার এবং প্রচারাভিযানে বাধা দেওয়ার মতো ঘটনা ব্যাপকভাবে আলোচিত হয়।

আন্তর্জাতিক প্রতিক্রিয়া

২০১৮ সালের নির্বাচন নিয়ে আন্তর্জাতিক মহল থেকেও প্রতিক্রিয়া আসে। বিভিন্ন পর্যবেক্ষক সংস্থা এবং বিদেশি রাষ্ট্র দূতাবাস থেকে বলা হয়, এই নির্বাচন সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ হয়নি। যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপীয় ইউনিয়ন এবং কমনওয়েলথসহ বিভিন্ন রাষ্ট্র ও সংস্থা নির্বাচনের নিরপেক্ষতা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে। জাতিসংঘও এই নির্বাচনের বিষয়ে হতাশা প্রকাশ করে এবং গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া সুরক্ষিত রাখার আহ্বান জানায়।

আওয়ামী লীগের অবস্থান

অন্যদিকে, আওয়ামী লীগ এবং তাদের সমর্থকরা এই নির্বাচনে তাদের বিজয়কে জনগণের ইচ্ছার প্রতিফলন হিসেবে বর্ণনা করে। তারা দাবি করে, দেশের উন্নয়ন, স্থিতিশীলতা এবং জনসেবার ধারাবাহিকতা বজায় রাখতে জনগণ তাদের প্রতি আস্থা রেখেছে। তবে নির্বাচনে বিরোধী দলের অংশগ্রহণ সত্ত্বেও বিরোধী প্রার্থীদের বিপুল ব্যবধানে পরাজিত হওয়া এবং অধিকাংশ আসন আওয়ামী লীগের হাতে চলে যাওয়া সন্দেহ উস্কে দেয়।

দেশের গণতন্ত্রের ওপর প্রভাব

২০১৮ সালের নির্বাচনের পর থেকে বাংলাদেশে গণতন্ত্রের ভবিষ্যৎ নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। একটি কার্যকর বিরোধী দল ছাড়া গণতান্ত্রিক চর্চা স্বাভাবিক হতে পারে না। এই নির্বাচনের মাধ্যমে রাজনৈতিক ব্যবস্থার প্রতি জনগণের আস্থা ক্ষুণ্ন হয়েছে এবং দীর্ঘমেয়াদে তা দেশের রাজনীতিতে গভীর সংকট সৃষ্টি করতে পারে।

২০১৮ সালের নির্বাচন বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ার জন্য একটি কলঙ্কজনক অধ্যায় হিসেবে চিহ্নিত হয়ে থাকতে পারে। যদিও আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থেকে বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ড পরিচালনা করেছে, তবে এই নির্বাচন প্রক্রিয়ায় সংঘটিত অনিয়ম এবং ভোট চুরির অভিযোগ দেশের রাজনৈতিক ব্যবস্থায় গভীর ক্ষত তৈরি করেছে। গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে শক্তিশালী এবং জনগণের আস্থা পুনরুদ্ধারে সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের কোনো বিকল্প নেই।

কুরআন ভিত্তিক রাষ্ট্রব্যবস্থা সংস্কারের রূপরেখা : প্রফেসর ড. কামরুল আহসান