Skip to Content

সরকারব্যবস্থা, সংসদ ও নির্বাচন বিষয়ক প্রস্তাব

নির্বাচন ও সংসদ বিষয়ক প্রস্তাব

১. রাষ্ট্রপতিশাসিত সরকারব্যবস্থা প্রবর্তন করতে হবে। তবে রাষ্ট্রপতি বর্তমানের মতো সংসদ সদস্যদের ভোটে নির্বাচিত ও অপসারিত হবেন। অর্থাৎ সংসদীয় পদ্ধতিতে নির্বাচিত রাষ্ট্রপতির মাধ্যমে রাষ্ট্রপতিশাসিত সরকারব্যবস্থা। রাষ্ট্রপতি দায়িত্ব গ্রহণের সময় থেকে দলীয় পরিচয়ের ঊর্ধ্বে থাকবেন। তিনি তাঁর নীতি নির্ধারণে সুবিধার জন্য বিশেষজ্ঞ উপদেষ্টা পরিষদ মনোনীত করবেন। রাষ্ট্রপতি তাঁর কাজের জন্য গণপরিসর, গণমাধ্যম, সংসদ ও আদালতের কাছে দায়ী থাকবেন।

২. সংসদ এককক্ষবিশিষ্ট থাকবে। (প্রতিটি প্রস্তাবকে সামগ্রিকভাবে বিবেচনা করলে দ্বিক্ষবিশিষ্ট সংসদের প্রয়োজনীয়তা থাকবে না।)

৩. জাতীয় সংসদ নির্বাচন হবে রাজনৈতিক দলগুলোর সংখ্যানুপাতিক প্রতিনিধিত্বের নির্বাচন। অর্থাৎ সমগ্র দেশে কোনো দলের মোট প্রাপ্ত ভোটের সংখ্যানুপাতিক নির্বাচনের মাধ্যমে ঐ দলের সংসদ সদস্য নির্বাচিত হবে।

৪. প্রত্যেক দলের কেন্দ্রীয় নেতারা তালিকা পদ্ধতি অনুসরণের ক্ষেত্রে প্রার্থীদেরকে নির্বাচনী আসনসমূহ থেকে বাছাই করবেন এবং সংশ্লিষ্ট আসনে নিজ দলের সাধারণ সদস্যদের জনমত জরিপ, প্রার্থীর বিষয়ে অভিযোগ তদন্ত এবং প্রার্থীর বিশেষ যোগ্যতা ও অবদানের মূল্যায়নের পদ্ধতি অবলম্বন করে, মান নির্ধারণ পদ্ধতিতে সফটওয়্যারের মাধ্যমে তালিকার ক্রম নির্বাচন করতে পারেন। অথবা রাজনৈতিক দলগুলোর দলীয় পরিসরে গণতন্ত্র নিশ্চিত করে নির্বাচিত নির্বাহী পরিষদের সুবিবেচনা অনুসারে (জাতীয় গ্রহণযোগ্যতা ও যোগ্যতা বিবেচনায়) সংসদ সদস্য পদের জন্য মনোনয়ন ও তার ক্রম চূড়ান্ত করতে পারেন।

যেহেতু সংসদের প্রধান কাজ আইন ও জাতীয় নীতি নির্ধারণ এবং জাতীয় পর্যায়ের উন্নয়ন তাই নিতান্ত রাজনৈতিক অবদানের চেয়ে দেশবরেণ্য চিন্তাবিদ, সামাজিক ও অরাজনৈতিক সংগঠন-সংস্থার সদস্য, সাবেক অধ্যাপক, সাবেক আমলা, সাবেক সামরিক কর্মকর্তা, সাবেক বিচারপতি ও আইনজীবি প্রমুখকে অগ্রাধিকার দেয়ার বিষয়ে রাজনৈতিক সচেতনতা বৃদ্ধিতে বিভিন্ন জনমত গঠনমূলক মাধ্যমকে কাজে লাগাতে হবে। (এটি করা গেলে দ্বিকক্ষবিশিষ্ট আইনসভার প্রস্তাবনার প্রয়োজন হবে না।)

যেহেতু আইন প্রণয়ন ও জাতীয় নীতি নির্ধারণ নির্বাচনী এলাকাভিত্তিক বিষয় নয়, তাই রাজনৈতিক দলের কেন্দ্রীয় বিবেচনায় সমগ্র দেশের মধ্য থেকে যাদেরকে বিভিন্ন ক্রাইটেরিয়ার ভিত্তিতে অগ্রাধিকার দিয়ে সংখ্যানুপাতিক পদ্ধতিতে নিজেদের সংসদীয় প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত করার জন্য তালিকা নির্বাচন কমিশনে জমা দেয়া হবে, তাতে আস্থা রাখা যেতে পারে। যেমন একটি দল ৩০০ সদস্যের তালিকা জমা দিলো। নির্বাচনের ভিত্তিতে যদি সংখ্যানুপাতে তারা ১০০ আসনের অধিকার লাভ করে তবে নির্বাচন কমিশন তাদের জমা দেয়া তালিকা থেকে ১-১০০ নং পর্যন্ত যারা আছে তাদেরকেই সংসদ সদস্য হিসেবে বেছে নেবে। অবশ্য নির্বাচন কমিশন কর্তৃক গণশুনানি ও অভিযোগ যাচাই সাপেক্ষে কেউ বাদ পড়লে ক্রমানুসারে নির্দিষ্ট সংখ্যা পূরণ হবে।

৫. সংখ্যানুপাতিক নির্বাচন পদ্ধতিতে কোনো দলের জন্য সংসদে কোনো আসন পাওয়ার জন্য ভোট প্রাপ্তির ন্যুনতম পার্সেন্টেজ নির্ধারণ করা হবে না। বরং স্বত:সিদ্ধভাবে যদি সংসদের আসন সংখ্যা ১০০ হয় তাহলে কোনো দল ১টি আসন পেতে হলে তাকে ১% ভোট পেতে হবে, এই নীতি কার্যকর হবে। সংসদীয় আসন ১০০ হলে যে দল ১% এর চেয়ে কম ভোট পাবে, স্বাভাবিকভাবে তারা কোনো আসন পাবে না। এভাবে সংসদীয় আসন ৩০০ হলে যে দল ০.৩৩% এর চেয়ে কম ভোট পাবে তারা কোনো আসন পাবে না।

৬. জাতীয় সংসদ নির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থিতার পদ্ধতি রহিত করে নতুন নতুন রাজনৈতিক দল গঠনকে যৌক্তিক নীতিমালার অধীনে সহজ করতে হবে।

[মনে হতে পারে যে, স্বতন্ত্র প্রার্থিতা রহিত করার প্রস্তাব জনগণের কাছে প্রার্থী নির্বাচনসংক্রান্ত স্বাধীনতা কিছুটা হ্রাস করবে। বস্তুত জনগণের সরাসরি প্রতিনিধিত্ব বিদ্যমান ব্যবস্থায়ও কার্যত দলীয় সিদ্ধান্তের উপর নির্ভরশীল। দল যাদেরকে সংসদ সদস্য প্রার্থী হিসেবে মনোনীত করে জনগণ তাদের মধ্য থেকেই নিজেদের প্রার্থী বাছাই করে থাকে, অন্যথায় স্বতন্ত্র প্রার্থীকে বাছাই করার সুযোগ রয়েছে। তবে সাধারণত স্বতন্ত্র প্রার্থীদের মধ্য থেকে কমসংখ্যক প্রার্থীই নির্বাচিত হয়। এ প্রস্তাবে স্বতন্ত্র প্রার্থীরা স্বতন্ত্র প্রার্থী হওয়ার পরিবর্তে নতুন রাজনৈতিক দল গঠনের সুযোগ রয়েছে বিধায় জনপ্রতিনিধিত্ব হ্রাস পাওয়ার আশংকা নেই।]

৭. জাতীয় সংসদের আসন সংখ্যা হ্রাস করা যেতে পারে। আইন প্রণয়ন ও নীতি নির্ধারণের জন্য এত আসনের প্রয়োজন নেই। যেহেতু সংখ্যানুপাতিক নির্বাচন হবে এবং স্থানীয় শাসন থেকে জাতীয় সংসদকে সম্পূর্ণ স্বতন্ত্র করা হবে, তাই প্রত্যেক উপজেলা হবে একটি নির্বাচনী আসন এবং মোট নির্বাচনী আসনের অর্ধেক পরিমাণ হবে জাতীয় সংসদের আসন সংখ্যা- এই পদ্ধতি অবলম্বন করা যেতে পারে।

৮. জাতীয় সংসদে কোনো সংরক্ষিত আসনের প্রয়োজন নেই। বরং প্রতিটি দল নির্বাচন কমিশনে জমা দেয়া তালিকায় তাদের মনোনীত প্রতিনিধিদের মধ্যে অন্তত ১০% নারী সদস্য রাখবে, এরূপ নীতি প্রণয়ন করা যেতে পারে।

৯. সরকার বা মন্ত্রীপরিষদও গঠিত হতে হবে সংখ্যানুপাতিক পদ্ধতিতে 'জাতীয় সরকার' হিসেবে। অর্থাৎ প্রত্যেকবার সরকার গঠিত হবে ‘জাতীয় সরকার’ হিসেবে, এটা একটা স্থায়ী ব্যবস্থা হবে। সংসদ সদস্যদের সংখ্যানুপাতে কোনো দলের মন্ত্রীসংখ্যা এবং ক্রমধারা অনুসারে মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পাবে। মন্ত্রীপরিষদের সদস্যরা নিজ নিজ দলের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য গণ্য হবেন এবং দলীয় নির্বাহী দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি নেবেন।

১০. জনগণের প্রত্যক্ষ প্রতিনিধি নির্বাচিত হবে স্থানীয় সরকারের ক্ষেত্রে (বিভাগীয় পরিষদ, জেলা পরিষদ, উপজেলা পরিষদ ও ইউনিয়ন পরিষদ)। স্থানীয় সরকার নির্দলীয় পদ্ধতিতে নির্বাচিত হতে হবে। স্থানীয় সরকার একটি স্বতন্ত্র কর্তৃপক্ষের অধীন হবে এবং স্থানীয় সরকারের মাধ্যমেই স্থানীয় উন্নয়ন কার্যক্রম পরিচালিত হবে।

১১. সংসদ সদস্যদেরকে স্থানীয় শাসন থেকে সম্পূর্ণ পৃথক করা। সংসদ সদস্যরা স্থানীয় উন্নয়নে কাজ করবেন না, বরং শুধুমাত্র জাতীয় আইন ও নীতিমালা প্রণয়নে এবং জাতীয় পর্যায়ের উন্নয়নে কাজ করবেন।

১২. সারা দেশে সকল স্তরের (বিভাগীয় পরিষদ, জেলা পরিষদ, উপজেলা পরিষদ, ইউনিয়ন পরিষদ) স্থানীয় সরকার নির্বাচন একসাথে অনুষ্ঠিত হবে। মেয়র বা চেয়ারম্যান জনগণের প্রত্যক্ষ ভোটে নির্বাচিত হবেন না, বরং জনগণের প্রত্যক্ষ ভোটে নির্বাচিত কাউন্সিলর বা নির্বাচিত সদস্যদের ভোটে নির্বাচিত ও প্রয়োজনে মেয়র বা চেয়ারম্যান পদ থেকে অপসারিত হবেন। এভাবে স্থানীয় সরকারেও সংসদীয় পদ্ধতি বাস্তবায়িত হবে।

১৩. জাতীয় সংসদ/ সরকার ও স্থানীয় সংসদ/ সরকার উভয় নির্বাচন হতে হবে নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে। আর তাই নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের মেয়াদ অন্তত ৬ (ছয়) মাস হতে হবে।

১৪. সর্বস্তরের জনপ্রতিনিধি নির্বাচিত হওয়ার ক্ষেত্রে শিক্ষাগত যোগ্যতা নির্ধারণ করতে হবে। বাংলাদেশের বর্তমান শিক্ষা পরিস্থিতি অনুসারে এ যোগ্যতা ন্যুনতম স্নাতক বা তার সমমান হতে হবে।

প্রস্তাবক : শওকত জাওহার

২০২৪ এর আওয়ামী ভোট চুরির নির্বাচন: একটি বিশ্লেষণ