ভূমিকা
- সংবিধান একটি নীতিমালার ভিত্তিতে তৈরি হবে।
- নীতিমালা তৈরির ভিত্তি (বেসিস) হবে কুরআন।
- কেননা কুরআন বিশ্বসমূহের সৃষ্টিকর্তা আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালার পাঠানো মানুষের জন্য একটি গাইড বই। এতে কোনো ভুল নেই এবং কোনো ভুল ঢুকানো সম্ভব নয় (২:২, ৪১:৪২)। এই বইটিতে মানুষের প্রয়োজনীয় সমস্ত কিছু বর্ণিত হয়েছে (১৬:৮৯, ৬:৩৮)। এখন পর্যন্ত প্রমাণিত কোনো বৈজ্ঞানিক থিওরী কুরআনকে বিরোধিতা করেনি। কুরআনে কিছু বৈজ্ঞানিক ইঙ্গিত রয়েছে যা মানুষ রিসেন্ট পাস্টেও জানত না। (Q. Ahsan and Shuhaib Ahsan, "The Concept of Material Transfer from One Place to Another at the Speed of Light and Reducing Causes of Earthquake: Developed Based on the Hints of Quranic Verses," Quranica, Vol. 12, Issue 1, June 2020, Pages 19-44)
যে সব সিস্টেমের নীতিমালা সংবিধানে থাকতে হবে তা হলো-
১. শাসন ব্যবস্থা
২. নির্বাচন ব্যবস্থা
৩. অর্থনৈতিক ব্যবস্থা
৪. বিচার ব্যবস্থা
মূল কাঠামো
উপরিউক্ত প্রতিটি সিস্টেমের মূল কাঠামো হবে নিম্নরূপ:
শাসন ব্যবস্থা
- শাসনব্যবস্থা পরিচালিত হবে একজন চিফ এক্সিকিউটিভ দ্বারা। তিনি জনগণের ভোটে সরাসরি নির্বাচিত হবেন।
- তার অধীনে প্রত্যেক মন্ত্রণালয়ের জন্য সেই মন্ত্রণালয়ের বিষয়ে বিশেষজ্ঞ একজনকে তিনি নিয়োগ দেবেন। বিশেষজ্ঞের যোগ্যতা ও অভিজ্ঞতা সুস্পষ্টভাবে সরকারি ওয়েবসাইটে উল্লেখ থাকবে। এই নিয়োগে কোনো ধরনের স্বজনপ্রীতির সুযোগ থাকবে না।
- মন্ত্রণালয় পরিচালনায় কোনো ধরনের আমলাতান্ত্রিক ইনভলভমেন্টের সুযোগ থাকবে না। উদাহরণস্বরূপ, বিদ্যুৎ মন্ত্রণালয়ের কাজ হচ্ছে বিদ্যুৎ উৎপাদন ও বিতরণ। বিদেশ থেকে বিদ্যুৎ ক্রয় ও বিক্রয়ের কাজও এই মন্ত্রণালয় করে থাকে। এই সকল কাজের জন্য অনেক সংস্থা আছে, যেমন পাওয়ার জেনারেশন, ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানিজ, পাওয়ার সেল ইত্যাদি। এই সকল অর্গানাইজেশন সরাসরি সেই বিশেষজ্ঞের কাছে রিসপনসিবল থাকবে। অর্থাৎ বিশেষজ্ঞ এবং অর্গানাইজেশনের মাঝে কোনো মধ্যস্থতাকারী প্রতিষ্ঠান বা ব্যক্তি থাকবে না।
নির্বাচন ব্যবস্থা
- নির্বাচন ব্যবস্থায় গণতন্ত্রের পূর্ণ বিকাশ ঘটাতে হবে। প্রত্যেক ভোটারের তার পছন্দের ব্যক্তিকে ভোট দেওয়ার সুযোগ থাকতে হবে।
- প্রচলিত ব্যবস্থায় কিছু ব্যক্তি নির্বাচিত হওয়ার জন্য দাঁড়ান। এতে প্রচুর অর্থের অপচয় হয় এবং অহেতুক অনেক লোকের সময় নষ্ট হয়। ব্যক্তি বা দলের মধ্যে দ্বন্দ্ব ও সংঘর্ষ হয়। যারা দাঁড়ান, তাদের মধ্য থেকে একজনকে বেছে নিতে বাধ্য হয় একজন ভোটার। বেছে নেওয়া ব্যক্তিটি ভোটারের পছন্দের হোক বা না হোক।
- তাই, চিফ এক্সিকিউটিভ নির্বাচনে কেউ ভোট প্রার্থী হবেন না। প্রত্যেক ভোটার তার নিজের পছন্দের ব্যক্তিকে ভোট দেবেন। সর্বাধিক ভোটপ্রাপ্ত ব্যক্তি চিফ এক্সিকিউটিভ হবেন। যদি তিনি এই পদ গ্রহণ করতে না চান, তাহলে দ্বিতীয় সর্বাধিক ভোটপ্রাপ্ত ব্যক্তি এই পদে নিযুক্ত হবেন। যদি তিনিও না চান, তবে তৃতীয় সর্বাধিক ভোটপ্রাপ্ত ব্যক্তিটি নির্বাচিত হবেন। এইভাবে চিফ এক্সিকিউটিভ নির্বাচিত হবেন।
- নির্বাচন পরিচালনার জন্য ইলেকট্রিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং এবং কম্পিউটার সায়েন্সের সর্বশেষ প্রযুক্তি প্রয়োগ করা হলে নির্ভুল নির্বাচন করা সম্ভব হবে।
অর্থনৈতিক ব্যবস্থা
- অর্থনৈতিক ব্যবস্থার মূল ভিত্তি হবে সুদমুক্ত অর্থনীতি। ব্যাংকিং সিস্টেমে ইসলামী ব্যাংকের পদ্ধতি পুরোপুরি প্রচলন করতে হবে। তবে ইসলামী শরীয়ত অনুযায়ী ইসলামী ব্যাংকিংয়ের কোনো ত্রুটি থাকলে তা সংশোধন করতে হবে।
- সরকারিভাবে যাকাত ব্যবস্থা দেশে চালু করতে হবে এবং মুসলিম নাগরিকদের জন্য যাকাত প্রদান বাধ্যতামূলক করতে হবে। যাকাত বিতরণের জন্য কুরআনে উল্লেখিত খাতসমূহ ঠিক রেখে এমন একটি ব্যবস্থা তৈরি করতে হবে যার প্রতি সবাই আস্থাভাজন হয়।
- উন্নয়ন কাজ ও সরকারি খরচ মেটানোর জন্য ট্যাক্স নির্ধারণ পদ্ধতি স্বচ্ছ হতে হবে, যাতে কোনো অনৈতিকতা বা স্বজনপ্রীতির সুযোগ না থাকে।
- সরকারি আয় ও ব্যয়ের হিসাব সম্পূর্ণভাবে সরকারি ওয়েবসাইটে পোস্ট করতে হবে। চিফ এক্সিকিউটিভসহ সকল সরকারী কর্মচারীদের সম্পদ হ্রাস-বৃদ্ধির হিসাব এবং আয়-ব্যয়ের হিসাব জনগণের দেখার জন্য ওয়েবসাইটে রাখতে হবে। কারো ক্ষেত্রে কোনো অসঙ্গতি দেখা দিলে, তার বিরুদ্ধে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।
বিচার ব্যবস্থা
- প্রতিটি আইন কুরআন ভিত্তিক হতে হবে এবং প্রতিটি আইন অত্যন্ত সাবলীল ভাষায় লিখতে হবে, যেন সবাই সহজে বুঝতে পারে।
- প্রতিটি আইন লঙ্ঘনের শাস্তি স্পষ্টভাবে উল্লেখ থাকবে।
- বিচারক নির্বাচনের ক্ষেত্রে তার সততা, ন্যায়পরায়ণতা এবং বিজ্ঞতাই প্রধান বিবেচ্য বিষয় হবে। বিচারকদের যোগ্যতার মানদণ্ড সুস্পষ্টভাবে উল্লেখ থাকবে। অর্থাৎ বিচারক এমনভাবে সিলেক্ট করতে হবে যেন তাঁরা হন সৎ, ন্যায়পরায়ণ, মেধাবী এবং বিচক্ষণ।
- বিচারকদের যোগ্যতার মানদণ্ডসহ সমস্ত আইন সরকারি ওয়েবসাইটে প্রকাশিত থাকবে।
- সবার জন্য একই আইন প্রযোজ্য হবে; কোনো ব্যক্তি কোনো আইনের ক্ষেত্রে ছাড় পাবে না।
- কোনো বিচারক যদি পক্ষপাতদুষ্টভাবে বিচার করেন, সঙ্গে সঙ্গে তার বিরুদ্ধে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।
সংবিধান পরিবর্তন:
সংবিধানে কোন পরিবর্তন করতে হলে ৭৫% ভোটারের সম্মতি থাকতে হবে।
লেখক:
প্রফেসর ড. কামরুল আহসান সাবেক অধ্যাপক ও ডীন, বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় (বুয়েট), ঢাকা
–