Skip to Content

সরকারী দপ্তরের গল্প

এক কোম্পানিতে কাজ করত এক পিঁপড়া। 

সে প্রতিদিন সকাল আটটায় অফিসে ঢুকত এবং কোনো ধরনের সময় নষ্ট না করে কাজ শুরু করে দিত। তার কর্মদক্ষতার ফলে কোম্পানির উৎপাদন অনেক বেড়ে যেত, আর সে কাজের আনন্দে দিন কাটাত।

কোম্পানির সিইও সিংহ খেয়াল করল যে, এই পিঁপড়াটি কোনো রকম সুপারভিশন ছাড়াই এতটা পরিশ্রম করছে। সিংহ ভাবল, যদি তাকে কারও তত্ত্বাবধানে রাখা হয়, তাহলে হয়তো আরও বেশি কাজ হবে। 

সেই ভাবনা থেকে কয়েক দিনের মধ্যেই সিংহ একটি তেলাপোকাকে পিঁপড়ার সুপারভাইজার হিসেবে নিয়োগ দিল। তেলাপোকাটি খুব অভিজ্ঞ সুপারভাইজার ছিল এবং রিপোর্ট লেখায় দক্ষ। অফিসে ঢুকেই তেলাপোকাটি অ্যাটেনডেন্স সিস্টেম চালু করল। কয়েক দিন পরেই তার মনে হলো একজন সেক্রেটারি দরকার, যে তাকে রিপোর্ট তৈরি করতে সহায়তা করবে। তাই সে একটি মাকড়সাকে নিয়োগ দিল, যে অফিসের ফোন কল মনিটর করবে এবং নথিপত্রের কাজ সামলাবে।

সিংহ খুশি হয়ে দেখল যে, তেলাপোকা নিয়মিতভাবে তার কাজের রিপোর্ট দিচ্ছে এবং বিশ্লেষণের জন্য গ্রাফ তৈরি করছে। এই বিশ্লেষণ বোর্ড মিটিংয়ে পেশ করার সময় সিংহ অনেক বাহবা পাচ্ছিল।

কিছুদিনের মধ্যেই তেলাপোকা একটি কম্পিউটার ও লেজার প্রিন্টারের প্রয়োজন অনুভব করল, তাই একটি আইটি ডিপার্টমেন্ট গঠন করল। আইটি বিশেষজ্ঞ হিসেবে নিয়োগ পেল একটি মাছি।

এদিকে পিঁপড়ার কাজের পরিবেশ বদলে গেল। যেখানে সে প্রতিদিন আনন্দের সঙ্গে কাজ করত, এখন সেখানে তাকে প্রচুর কাগজপত্রের কাজ করতে হচ্ছে এবং সপ্তাহের চার দিন নানা মিটিংয়ে উপস্থিত থাকতে হচ্ছে। এর ফলে তার উৎপাদন কমে গেল, আর সে বিরক্ত হতে শুরু করল।

সিংহ ভাবল, পিঁপড়ার বিভাগকে আলাদা একটি ডিপার্টমেন্ট হিসেবে ঘোষণা করার এখনই উপযুক্ত সময়। তাই সে ঝিঁঝি পোকাকে ওই ডিপার্টমেন্টের প্রধান হিসেবে নিয়োগ দিল। ঝিঁঝি পোকা প্রথম দিনই তার অফিসের জন্য আরামদায়ক কার্পেট এবং নতুন চেয়ার অর্ডার করল। কয়েক দিনের মধ্যেই সে একটি স্ট্র্যাটেজিক প্ল্যান তৈরি করতে একটি কম্পিউটার ও ব্যক্তিগত সহকারীর প্রয়োজন অনুভব করল। সহকারী হিসেবে সে তার পুরোনো অফিসের একজনকে নিয়োগ দিল।

আগে যেখানে পিঁপড়ার অফিসে চমৎকার কাজের পরিবেশ ছিল, এখন সেখানে কারো হাসির শব্দ শোনা যায় না। সবাই মনমরা হয়ে কাজ করে। ঝিঁঝি পোকা সিংহকে বোঝাল, অফিসের কাজের পরিবেশের ওপর একটি জরিপ খুব জরুরি। 

সিংহ যখন উৎপাদনের হ্রাস লক্ষ্য করল, তখন সে বিখ্যাত কনসালট্যান্ট পেঁচাকে নিয়োগ দিল। পেঁচা তিন মাস ধরে পিঁপড়ার ডিপার্টমেন্ট পর্যবেক্ষণ করল এবং তারপর একটি বিশাল রিপোর্ট পেশ করল। সেই রিপোর্টে বলা হয়েছিল, "এই অফিসে প্রয়োজনের তুলনায় কর্মী বেশি আছে, তাই কর্মী ছাঁটাই করা উচিত।" 

অল্প কিছু দিনের মধ্যেই কয়েকজন কর্মী ছাঁটাই করা হলো। প্রথমেই চাকরি হারালো কে? 

দুঃখজনকভাবে, সেই হতভাগ্য পিঁপড়া। কারণ পেঁচার রিপোর্টে লেখা ছিল যে, "এই কর্মীর মোটিভেশনের অভাব রয়েছে এবং তার আচরণ অফিসের কর্মপরিবেশ নষ্ট করছে।" 

পিঁপড়া, যে একসময় নিরলস পরিশ্রম করত, অফিসিয়াল জটিলতার কারণে চাকরি হারিয়ে নিস্তব্ধ হয়ে গেল।

সরকারী একটি দপ্তর কিভাবে চলে গল্পটি তারই দৃষ্টান্ত। 

Write on Cow