শিক্ষা একটি জাতির অগ্রগতির মূল চালিকা শক্তি। যে কোনো উন্নত সমাজের ভিত্তি হলো তার সুশিক্ষিত জনগোষ্ঠী। কিন্তু বর্তমান সময়ে বাংলাদেশের শিক্ষাব্যবস্থা নিয়ে নানা প্রশ্ন উঠছে। মানসম্মত শিক্ষা, প্রযুক্তিগত দক্ষতা, এবং বাস্তবমুখী শিক্ষার অভাবে তরুণ সমাজের একটি বড় অংশ কর্মক্ষম হয়ে উঠতে পারছে না। এই সংকট সমাধানে প্রয়োজন শিক্ষাব্যবস্থার নতুন করে মূল্যায়ন ও আধুনিকায়ন।
বর্তমান সময়ে বাংলাদেশের শিক্ষা খাতে কিছু ইতিবাচক পরিবর্তন লক্ষ্য করা গেলেও, তা সর্বজনীন মান অর্জনে এখনও ব্যর্থ। প্রাথমিক ও মাধ্যমিক শিক্ষায় ভর্তি হার বৃদ্ধি পেয়েছে, কিন্তু সেইসঙ্গে শিক্ষার মানও উন্নত হয়েছে কি? পরীক্ষাভিত্তিক শিক্ষাব্যবস্থার কারণে শিক্ষার্থীরা ক্রমাগত মুখস্থ নির্ভর হয়ে পড়ছে। এই প্রবণতা সৃজনশীলতা ও সমালোচনামূলক চিন্তাভাবনা বাধাগ্রস্ত করছে।
একইভাবে, উচ্চশিক্ষার ক্ষেত্রেও অসংগতি পরিলক্ষিত হয়। দেশে উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা বাড়লেও, সেই সঙ্গে বাড়েনি শিক্ষার গুণগত মান। বিশেষত, বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে গবেষণা ও উদ্ভাবনের অভাব উদ্বেগজনক। আমাদের শিক্ষার্থীরা আন্তর্জাতিক মানের গবেষণায় পিছিয়ে পড়ছে।
শিক্ষাব্যবস্থার অন্যতম বড় চ্যালেঞ্জ হলো প্রযুক্তি ও বাস্তবমুখী শিক্ষার অভাব। আধুনিক বিশ্বের সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলতে হলে, আমাদের শিক্ষার্থীদের প্রযুক্তিগত দক্ষতায় দক্ষ করে গড়ে তুলতে হবে। এর জন্য প্রয়োজন সুনির্দিষ্ট শিক্ষাক্রম এবং প্রশিক্ষণ ব্যবস্থা।
আরেকটি বড় বিষয় হলো, শিক্ষক-শিক্ষার্থীর অনুপাত। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পর্যাপ্ত শিক্ষকের অভাব এবং তাদের দক্ষতা উন্নয়নে পর্যাপ্ত উদ্যোগের অভাবে শিক্ষার্থীরা মানসম্মত শিক্ষা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে।
সমাধানের পথে এগিয়ে যেতে হলে, আমাদের শিক্ষাব্যবস্থায় তিনটি মূল বিষয়ে জোর দিতে হবে:
- সৃজনশীল শিক্ষার বিকাশ: পরীক্ষাভিত্তিক শিক্ষার পরিবর্তে সৃজনশীল ও দক্ষতাভিত্তিক শিক্ষা ব্যবস্থা চালু করা প্রয়োজন।
- প্রযুক্তি অন্তর্ভুক্তি: শিক্ষা কারিকুলামে প্রযুক্তি ও উদ্ভাবনী বিষয় অন্তর্ভুক্ত করতে হবে।
- শিক্ষকের মানোন্নয়ন: শিক্ষকদের প্রশিক্ষণ এবং পেশাগত উন্নয়নে বিনিয়োগ বৃদ্ধি করতে হবে।
শিক্ষার উন্নয়ন একটি ধীরপ্রক্রিয়া হলেও এটি একটি জাতির দীর্ঘমেয়াদি উন্নতির মূল চাবিকাঠি। তাই, সময় এসেছে নতুন করে ভাবার এবং কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়ার। আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে একটি সৃজনশীল, দক্ষ এবং উন্নত শিক্ষাব্যবস্থা দিয়ে গড়ে তোলাই হবে আমাদের অগ্রাধিকার।