Skip to Content

বাণিজ্যিক উন্নয়ন: আন্তর্জাতিক বাজারে বাংলাদেশের অবস্থান

একদিন পরেই শেষ হচ্ছে ২০২৪। অর্থনীতিতে নানা ধরনের সংকট নিয়েই শুরু হয়েছিল বছরটি, আশাবাদও ছিল। কিন্তু সংকট আর চাপ থেকে আর বের হতে পারেনি অর্থনীতি। বছরের মাঝামাঝি ছাত্র–জনতার প্রবল আন্দোলনে পতন ঘটে দেড় দশক ধরে ক্ষমতায় থাকা আওয়ামী লীগ সরকারের। রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর গঠিত অন্তর্বর্তী সরকারের কাঁধে এখন দায়িত্ব অর্থনীতির ক্ষত সারানোর, নতুন করে শুরু করার। ২০২৪ সালকে ব্যবসায়ীরা কীভাবে দেখছেন আর নতুন বছরে তাদের প্রত্যাশা কী, তা নিয়েই আমাদের আয়োজন।

বাংলাদেশের জন্য ২০২৪ সালটি ঐতিহাসিক। চ্যালেঞ্জ, ত্যাগ ও আশার এক যুগান্তকারী সময় এ বছর। জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার আন্দোলন এই জাতির গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠার লড়াইয়ে মোড় ঘুরিয়ে দেয়। সে সময় দেশ স্থবির হয়ে পড়লেও পুনর্গঠনের স্পৃহাও দ্রুত জেগেছিল।

আমাদের দেশের মূল চালিকা শক্তি তৈরি পোশাকশিল্প জুলাই-আগস্টে বড় সমস্যার মুখে পড়েছিল। ওই সময় কয়েক দিন কারখানা বন্ধ রাখতে হয়েছিল। রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর সরকারবিহীন সময় এবং তারপর আকস্মিক বন্যা ও আশুলিয়ার মতো গুরুত্বপূর্ণ শিল্পাঞ্চলে শ্রম অসন্তোষ পরিস্থিতিকে আরও জটিল করে তোলে। তখন মালিকদের অনেকেই আর্থিক সমস্যায় বেতন পরিশোধে হিমশিম খান। তবে শ্রমিক ও মালিকেরা ঐক্যবদ্ধ থেকে উৎপাদন অব্যাহত রাখেন। এটি প্রমাণ করে, দেশের অর্থনীতি পরিশ্রম আর ঐক্যের ওপর গড়ে উঠেছে।

চলতি বছরের দ্বিতীয়ার্ধে তৈরি পোশাকশিল্পে কয়েক দফা সুযোগ-সুবিধা বাড়ানো নিয়ে আন্দোলন-বিক্ষোভ হয়েছে। মূল্যস্ফীতির এ সময় শ্রমিকদের স্বস্তি দিতে অপরিহার্য পণ্য ভতুর্কিমূল্য দেওয়ার ব্যবস্থা করা প্রয়োজন। শ্রমিকদের কম খরচে আবাসনব্যবস্থার উদ্যোগ নেওয়াও দরকার। অন্যদিকে ন্যায্য মজুরি ধাপে ধাপে বাস্তবায়নে একটি পথনকশা করা যেতে পারে।

চলতি বছর ব্যাংকিং খাত বড় ধাক্কা খেয়েছে। সেপ্টেম্বরে খেলাপি ঋণ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২ লাখ ৮৫ হাজার কোটি টাকা, যা মোট বিতরণকৃত ঋণের ১৭ শতাংশ। এই অর্থের বড় অংশ বিদেশে পাচার হওয়ায় পুঁজির ঘাটতি ও বিশ্বাসের সংকট তৈরি হয়েছে। সামনে খেলাপি ঋণ বাড়লে সংকট আরও বাড়তে পারে। মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণের জন্য ব্যাংকঋণের সুদের হার বাড়ানো হয়েছে। সুদের হার বাড়িয়ে চাহিদাভিত্তিক মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ করা গেলেও আমাদের মূল্যস্ফীতি মূলত সরবরাহের ঘাটতি ও অদক্ষতার কারণে। ফলে এই সমাধান ভিন্নভাবে করতে হবে।

বৈশ্বিক বাণিজ্যে বাংলাদেশ একটি কৌশলগত সন্ধিক্ষণে দাঁড়িয়ে আছে। যুক্তরাষ্ট্রের নবনির্বাচিত প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রশাসন চীন ও মেক্সিকোর পণ্যের ওপর উচ্চ শুল্ক আরোপ করলে আমাদের পণ্যের রপ্তানি বৃদ্ধি ও বিদেশি বিনিয়োগ আকর্ষণের সুযোগ তৈরি হবে। প্রতিযোগিতামূলক শ্রমবাজার, কৌশলগত অবস্থা ও উন্নয়নশীল অবকাঠামো বাংলাদেশকে একটি বৈশ্বিক উৎপাদন হাব হিসেবে গড়ে তোলার সম্ভাবনা তৈরি করেছে। এ সুযোগ কাজে লাগাতে হলে ব্যবসার নিয়মকানুন সহজ করা, বন্দর আধুনিকায়ন ও সহজ বিনিয়োগ প্রক্রিয়া নিশ্চিত করতে হবে।

অন্তর্বর্তী সরকার বেশ কয়েকটি সংস্কার কমিশন করেছে। তবে দুর্নীতি দমনে কঠোর আইনি কাঠামো প্রবর্তন, আমলাতন্ত্রের সংস্কার করে প্রশাসনিক দক্ষতা বাড়ানো, ব্যাংক খাতের সংস্কার করে অনলাইন ঋণব্যবস্থা ও স্বচ্ছতা নিশ্চিতে অগ্রাধিকার দেওয়া দরকার। এ ছাড়া নিরাপত্তা ও স্থিতিশীলতা নিশ্চিতে প্রতিরক্ষা বাহিনী ও পুলিশ বাহিনীকে আরও সক্রিয় করতে হবে।

বর্তমান পরিস্থিতিতে ব্যবসায়ীদের আস্থা ফেরানো জরুরি। সংস্কার ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের মাধ্যমে সেটি সম্ভব। ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থান জাতি গঠনের সুযোগ এনে দিয়েছে। আমাদের উচিত এই সুযোগের সদ্ব্যবহার করে একটি গৌরবময় বাংলাদেশ গড়ে তোলা, যেখানে গণতন্ত্র, ন্যায্যতা ও সমান সুযোগ নিশ্চিত হবে।

শরীফ জহির

ব্যবস্থাপনা পরিচালক, অনন্ত গ্রুপ

যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপের বাণিজ্যিক সম্পর্ক: চ্যালেঞ্জ ও সহযোগিতা